
পহেলগাঁওতে জঙ্গিহানায় ২৬ জন পর্যটকের খুন হওয়ার ঘটনার একজোট হয়ে নিন্দা করেছে বিজেপি, সিপিআইএম, কংগ্রেস সহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অপরাধীদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এক্স মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদী লেখেন, "জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্তদের সকল সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।"
তিনি আরও লেখেন, "এই জঘন্য কাজের পিছনে যারা রয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদের রেহাই দেওয়া হবে না! তাদের দানবিক উদ্দেশ্য কখনও সফল হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আমাদের সংকল্প অটল এবং এটি আরও শক্তিশালী হবে।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক্স মাধ্যমে জানান, "জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হওয়া সন্ত্রাসী হামলায় আমি মর্মাহত। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা। এই নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের রেহাই দেওয়া হবে না এবং আমরা অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তি দেব।"
সিপিআইএম এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, "ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-এর পলিটব্যুরো জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা ২৮ জন পর্যটকের বর্বর হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সিপিআই(এম) এই হামলায় প্রাণ হারানো নিরীহ মানুষের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। এই হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। সিপিআই(এম) তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে।"
সিপিআইএম-র পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, "এই ভয়াবহ অপরাধের জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে। পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। এই অপরাধের সাথে যুক্তরা দেশের শত্রু, বিশেষ করে কাশ্মীরের জনগণের। জনাকীর্ণ পর্যটন স্থানগুলিতে নিরাপত্তার অভাব সহ আক্রমণের সকল দিক তদন্ত করা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। চরমপন্থী মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এই মর্মান্তিক মুহূর্তে সিপিআই(এম) ভারতের জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ।"
সকল দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে কংগ্রেসও। সোনিয়া গান্ধী বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশ ঐক্যবদ্ধ। এই বিভেদ সৃষ্টিকারী ও হিংসাত্মক শক্তিগুলিকে পরাজিত করার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।"
তিনি আরও বলেন, "এটি সহিংসতার আশ্রয় নেওয়া কাপুরুষোচিত কাজ। যার তীব্র নিন্দা করা উচিত। আমি আহতদের সম্পূর্ণ এবং দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা।
অন্যদিকে, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী এক্স মাধ্যমে জানান, "পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তারিক কারার সাথে কথা বলেছি। পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার ন্যায়বিচার পাক এবং তাঁদের সাথে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে"।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় নৃশংস জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিরীহ পর্যটক প্রাণ হারিয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এই বর্বরোচিত হামলার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়। মঙ্গলবার রাতেই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। ২০২৩ সালে টিআরএফকে ‘সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী’ হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্র।
নিহতদের মধ্যে ৩ জন্য পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। এর মধ্যে দু’জনের বাড়ি কলকাতাতে এবং একজনের পুরুলিয়ায়। জঙ্গি হামলায় নিহত মনীশরঞ্জন মিশ্র পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা। নিহত সমীর গুহ বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা এবং নিহত বিতান অধিকারী কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির বাসিন্দা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন