
* ১৪ বছরে রাজ্য ছেড়েছে ৬,৬৮৮ সংস্থা।
* রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদের প্রশ্নের উত্তরে জানালেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী।
* সব থেকে বেশি সংস্থা পাড়ি জমিয়েছে মহারাষ্ট্রে।
রাজ্যে পালাবদলের সময় থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৬,৬৮৮ টি সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে একথা জানিয়েছে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক (Ministry of Corporate Affairs)। ওই উত্তরে বলা হয়েছে ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৫-এর ৩১শে মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৬,৬৮৮টি সংস্থা তাঁদের রেজিস্টার্ড অফিস ভিন রাজ্যে নিয়ে গেছে। যে সব সংস্থার অধিকাংশই গেছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ সহ অন্যান্য রাজ্যে। অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের ১৪ বছরের শাসনকালে রাজ্য ছেড়েছে ৬,৬৮৮ সংস্থা।
রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যর করা এক প্রশ্নের উত্তরে গতকাল সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী হর্ষ মালহোত্রা লিখিত উত্তরে জানিয়েছেন, ২০১১-১২ সালে রাজ্য ছেড়েছে ২১৫ সংস্থা, ১২-১৩ তে ৮৭, ১৩-১৪-তে ৩৮৪, ১৪-১৫তে ৩৮২, ১৫-১৬-তে ৮৬৯, ১৬-১৭ তে ৯১৮, ১৭-১৮-তে ১,০২৭, ১৮-১৯-এ ৫৪২, ১৯-২০-তে ৬৭৮, ২০-২১-এ ৩০৬, ২১-২২-এ ২৭৩, ২২-২৩-এ ২৭০, ২৩-২৪-এ ৩৭১ এবং ২৪-২৫-এ ৩৬৬। অর্থাৎ মোট ৬,৬৮৮টি সংস্থা। যার মধ্যে সব থেকে বেশি সংস্থা রাজ্য ছেড়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে – ১,০২৭টি এবং সবথেকে কম ২০১২-১৩-তে – ৮৭টি। ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৭-১৮-র মধ্যে সবথেকে বেশি সংস্থা রাজ্য ছেড়েছে। মোট ২,৮১৪ টি।
তথ্য অনুসারে, যে ৬,৬৮৮টি সংস্থা রাজ্য ছেড়েছে তার মধ্যে ১,৩০৮টি সংস্থা গেছে মহারাষ্ট্রে, ১,২৯৭টি গেছে দিল্লিতে, ৮৭৯টি গেছে উত্তরপ্রদেশে, ৫১১টি সংস্থা গেছে ছত্তিশগড়ে এবং ৪২৩টি গেছে গুজরাটে। এই সংস্থাগুলির মধ্যে ১১০টি সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ। বাকি সংস্থার সংখ্যা ৬,৫৭৮।
নথিবদ্ধ ১১০টি সংস্থার মধ্যে মহারাষ্ট্রে গেছে ৪৫টি, দিল্লিতে ২০টি, গুজরাটে ১৪টি, তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানায় ৬টি করে, রাজস্থান ও ওড়িশায় ৪টি করে, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় ৩টি করে, মধ্যপ্রদেশে ২টি এবং ঝাড়খণ্ড, কেরালা ও দাদরা ও নগর হাভেলীতে ১টি করে।
নথিভুক্ত নয় এরকম যে ৬,৫৭৮টি কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ ছেড়েছে তার মধ্যে দিল্লিতে ১২৭৭, মহারাষ্ট্রে ১২৬৩, ছত্তিশগড়ে ৫১১, গুজরাটে ৪০৯, রাজস্থানে ৩২৯, কর্ণাটকে ২৬৮, আসামে ২৬৩, ঝাড়খণ্ডে ২৩৫, ওড়িশায় ১৯৭, মধ্যপ্রদেশে ১৮৪, হরিয়ানায় ১৬৪টি তামিলনাড়ুতে ১৫৫, তেলেঙ্গানায় ১৪৯, বিহারে ৮৬, অন্ধ্রপ্রদেশে ৬১, পাঞ্জাবে ৩৩, উত্তরাখণ্ডে ২৭টি, গোয়াতে ও চন্ডীগড়ে ১৮টি করে, হিমাচল প্রদেশে ১৫টি, মণিপুর ও মেঘালয়ে ১০টি করে, আন্দামানে ৯টি, দাদরায় ৫টি, ত্রিপুরায় ৩টি, কেরালায় ২টি, জম্মু ও কাশ্মীরে ১টি।
প্রসঙ্গত, রাজ্য থেকে প্রতি বছর দফায় দফায় শিল্প চলে গেলেও তা মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। এর আগে ২০২০ সালে রাজ্যের তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মুখ্যমন্ত্রীকে এক চিঠি লিখে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন। যদিও তাঁর চিঠির মূল বিষয় ছিল, রাজ্যের বহু চর্চিত বিজনেস সামিট। ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠিতে রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, ২০১৫-র জানুয়ারিতে প্রথম বিজনেস সামিট হয়েছিল। যেখানে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৬-র ৮ ও ৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় বিজনেস সামিটে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-র ২০ ও ২১ জানুয়ারি তৃতীয় বিজনেস সামিটে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। ২০১৮-র ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি চতুর্থ বিজনেস সামিটে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা, ২০১৯-এর ৭ এবং ৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম বিজনেস সামিটে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রথম পাঁচটি বিজনেস সামিটে রাজ্যে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ (Proposed Investment) হিসেবে দেখানো হয়েছিল ১২ লক্ষ ৩২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
এই তথ্য তুলে ধরে তৎকালীন রাজ্যপাল ধনখড় তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) জানিয়েছিলেন, বাণিজ্য সম্মেলন থেকে আর্থিক বিনিয়োগ কত এসেছে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই রাজ্য সরকারের কাছে। তিনি দাবি করেন, বেঙ্গল গ্লোবাল সামিটে যে আর্থিক লাভ এসেছে তার থেকে বেশি এই শিল্প সম্মেলনে খরচ হয়েছে। তিনি এই বাবদ রাজ্যকে লেখা চিঠিতে জানতে চান ২০১৬ পর এখন পর্যন্ত কত টাকা ব্যয় হয়েছে এই সম্মেলনে।
ধনখড় আরও প্রশ্ন করেন যে, কোন কোন সংস্থার মাধ্যমে এইসব খরচ হয়েছে। ওই সংস্থাকে সরাসরি টাকা নেওয়া হয়েছে না FICCI র মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর কত মউ সাক্ষরিত হয়েছে। এই মউ থেকে কত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং কত জন চাকরি পেয়েছেন। যদিও এই উত্তর পাওয়া গেছে কিনা তা পরবর্তী সময়ে জানাননি তদানীন্তন রাজ্যপাল।
এর আগে ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ মালহোত্রা জানিয়েছিলেন, ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছে ২২২৭টি ছোটো বড় সংস্থা। বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যর করা এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে (প্রশ্ন নম্বর ৮৬৭) একথা জানান মিনিস্ট্রি অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ারস দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ মালহোত্রা।
যদিও বিজেপি সাংসদের তোলা এই প্রশ্ন প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গকে ছোটো করা। বিজেপি সবসময়েই এটা করে থাকে। তিনি এই প্রশ্নকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলেও অভিহিত করেন।
Keywords: West Bengal, TMC rule, companies left, Rajya Sabha, Centre, West Bengal Industry
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন