স্কুল বন্ধ, করোনা বিধি মেনে গাছতলাতেই বাচ্চাদের পাঠশালা চালু করলেন প্রাথমিক শিক্ষক

ধুবুলিয়া ৭ নম্বর গ্রুপের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক স্কুলের সহ শিক্ষক। বছর চল্লিশের শিক্ষক ইন্দ্রনীল বন্দ্যেপাধ্যায় এলাকায় পরিচিত বামপন্থী ও মোহবাগানের কট্টর সমর্থক হিসাবে।
ইন্দ্রনীল বন্দ্যেপাধ্যায় ( ইনসেটে)
ইন্দ্রনীল বন্দ্যেপাধ্যায় ( ইনসেটে)ছবি - ইন্দ্রনীল বন্দ্যেপাধ্যায়ের ফেসবুক প্রোফাইল
Published on

স্যর, আবার কবে স্কুলে যাব? এই প্রশ্নটাই ভাবাতো তাঁকে। যখনই স্কুলে যেতেন, সে মিড ডে মিল দেওয়াই হোক বা অন্য কোনও কাজে। রাস্তায় দেখা হলেই বাচ্চারা তাঁকে ঘিরে রাখত। ছাত্ররা প্রশ্ন করবে আর তার উত্তর একজন শিক্ষক হয়ে দেবেন না? তা হয় নাকি কখনও?

উপায় বাতলে ফেললেন ধুবুলিয়া ৭ নম্বর গ্রুপের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক স্কুলের সহ শিক্ষক। বছর চল্লিশের শিক্ষক ইন্দ্রনীল বন্দ্যেপাধ্যায় এলাকায় পরিচিত বামপন্থী ও মোহবাগানের কট্টর সমর্থক হিসাবে। আমগাছের তলায় তিনি খুলে ফেললেন পাঠশালা। অবশ্যই কোভিড বিধি মেনে। দুজন পড়ুয়ার মাঝে যেন নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে, প্রত্যেকে যেন মাস্ক পরে আসে, সেই সব খেয়াল রেখেই শুরু হল ক্লাস।

করোনা সংক্রমণের হার ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির স্কুল চালু হয়েছিল গত নভেম্বরে। কিন্তু করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের তা বন্ধ হয়েছে। আবার কবে খুলবে স্কুল, তার কোনও জবাব নেই কারুর কাছেই। স্কুল-কলেজ খুলে যাওয়ায় অনলাইনে ক্লাস করার সমস্যা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়ারা যে ফের কবে স্কুলবাড়ির গন্ধ মেখে ক্লাস করতে পারবে, তার কোনও ঠিক নেই। পড়াশোনার সঙ্গে যোগসূত্র কমছে খুদেদের। এই অভিযোগও আরও দীর্ঘায়িত হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইন্দ্রনীলবাবু বুঝতে পারছিলেন, দীর্ঘদিনের অনভ্যাসে খুদে পড়ুয়ারা পড়াশোনা ভুলে যাচ্ছে। তাই তিনি ঠিক করেছেন, স্কুল বন্ধ থাকুক। কিন্তু নিজের মতো করে পড়ুয়াদের পড়াবেন। চালু রাখবেন পাঠশালা। তিনি স্কুলের আশেপাশের বাসিন্দা, পড়ুয়াদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেন। আলোচনায় ঠিক হয়, গ্রামের মাঝে, স্কুলের কাছে গৌতম সরকারের বাড়ির বাগানে আম গাছতলায় চলবে পাঠশালা। যেমন কথা, তেমন কাজ। পরিষ্কার হল গাছতলা। বৃহস্পতিবার সেখানেই শুরু হল পাঠশালা।

এদিন হাসিমুখে নানা রঙের পোশাকে হাজির হয়েছিল খুদেরা। কোভিড বিধি সম্পূর্ণ মেনেই হাজিরা দিয়েছে তারা। যে যার বাড়ি থেকে শতরঞ্চি নিয়ে এসেছে। গাছের তলায় সেই শতরঞ্চিতে বসে, মুখে মাস্ক পরে চলেছে এ দিনের নামতা পড়া। আর ব্ল্যাক বোর্ডে চক দিয়ে লিখে পড়িয়ে গিয়েছেন ইন্দ্রনীলবাবু।

ক্লাসের জন্য প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, শনি-রবিবার বাদে রোজ স্কুল চলবে। এক দিন প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং পর দিন তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস চলবে।

ইন্দ্রনীলবাবু যে এধরনের ক্লাসের ভাবনা চিন্তা করছেন, তা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন, 'যদি কোনো অভিভাবক অভিভাবিকা মনে করেন যে তাঁদের বাচ্চাকে পাঠাবেন একটু পড়তে বসতে, তাহলে নির্দ্বিধায় পাঠাবেন। করোনার ভয় থাকবে। তারপরেও যদি মনে করেন তো পাঠাবেন। অবশ্যই মাস্ক পরিয়ে পাঠাবেন। সঙ্গে একটা করে বসার চট বা আসন দেবেন। ছোটোবেলায় আমিও ওরকম চটের আসন নিয়ে ইস্কুলে যেতাম। আমি তাদের পড়াবো। এর সাথে বিদ্যালয়ের কোনোও সম্পর্ক নেই। কোনো টাকা পয়সাও লাগবে না। নতুন বছরে নতুন বইগুলোর সাথে বাচ্চাদের একটু পরিচিতি ঘটুক এটুকুই চাই।'

ক্লাস শুরু করার পর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বলেছিলেন, 'ছবিগুলোতেই বোঝা যাচ্ছে বাচ্চারা বা তাঁদের অভিভাবক অভিভাবিকারা কী চাইছেন। পাঠশালা চলবে। নিয়মিত চলবে বলে আশ্বাসও দেন।'

ইন্দ্রনীল বন্দ্যেপাধ্যায় ( ইনসেটে)
World Inequality Report: আর্থিক সংস্কারে ফায়দা হয়েছে শুধু ধনীদের - ভারত এখন 'চরম অসাম্যের দেশ'

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in