শুক্রবার ১০ অক্টোবর ঘোষিত হয়েছে ২০২৫-এর নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকের নাম। নোবেল কমিটি জানিয়েছে এবছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছে ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের দাবিদার হিসেবে ঘোষণা করলেও এবছর তাঁর নাম পুরষ্কারের জন্য বিবেচিত হয়নি। যা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী দক্ষিণপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত মারিয়া করিনা মাচাদোর পুরস্কার প্রাপ্তিতেও দেখা গেছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই এই ঘোষণাকে প্রবল ভাবে ‘রাজনৈতিক’ বলেই অভিহিত করেছেন। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মাচাদোর পুরস্কার প্রাপ্তিতে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ভেনেজুয়েলার বামপন্থী সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ দক্ষিণপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মারিয়া মাচাদো। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভেনেজুয়েলার বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও তিনি ইজরায়েল সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর ঘনিষ্ঠ হিসেবেও রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। অতীতে মধ্য-দক্ষিণপন্থী এই নেত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করবেন।
এর আগে ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের ওপর হামাসের আক্রমণের পর মারিয়া মাচাদো ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০২০ সালে মাচাদোর রাজনৈতিক দল ‘ভেন্তে ভেনেজুয়েলা’, “রাজনৈতিক, আদর্শগত এবং সামাজিক বিষয় ... কৌশল, ভূ-রাজনীতি এবং নিরাপত্তা" বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য লিকুদ পার্টির সাথে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের ১৮ মে এক এক্স বার্তায় (পূর্বতন ট্যুইটার) মাচাদো জানিয়েছিলেন, “ভেনেজুয়েলার সংগ্রাম, ইজরায়েলের সংগ্রাম”। প্রসঙ্গত লিকুদ বা ন্যাশনাল লিবারেল মুভমেন্ট হল ইজরায়েলের দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল, যার প্রধান বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হবার পর মাচাদো জানিয়েছিলেন, এবার আমাদের সামনে ভেনেজুয়েলার সরকার বদলের প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার ভারতীয় সময় দুপুর ২ টো ৩১ মিনিটে দ্য নোবেল প্রাইজ এক্স হ্যান্ডেলে মারিয়া করিনা মাচাদো-র নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণার পর ওই পোষ্টে একাধিক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন এবং এই নির্বাচনের সমালোচনা করেছেন।
মাইকেল মেডবেড তাঁর মন্তব্যে জানিয়েছেন, “গাজার সাংবাদিকদের অথবা ফ্লোটিলা আন্দোলনকারীদের নোবেল পুরস্কার দেবার বদলে একজন আমেরিকাপন্থী ইহুদি রাষ্ট্র সমর্থককে নোবেল প্রদান এক পরিহাস।”
ভিনিসিওস বেটিওল তাঁর বক্তব্যে জানিয়েছেন, “নোবেল শান্তি পুরষ্কার বর্ণবাদী, সাম্রাজ্যবাদী এবং একটি অভিজাত বিশ্বদৃষ্টির অধিকারী। এটি মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের পুরষ্কার দেয় যারা যুদ্ধ চালিয়েছেন এবং অন্যান্য দেশের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন, এবং এটি ভেনেজুয়েলায় একজন মার্কিন প্রতিনিধিকেও পুরস্কৃত করে যারা কয়েক দশক ধরে আক্রমণের শিকার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলায় আক্রমণকে সহায়তা করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ আছে কি?”
জনৈক লরেন্স বোরস্টিয়েন তাঁর বক্তব্যে জানিয়েছেন, “ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং সুমাতে-র সাথে কাজ করার সময়, মারিয়া করিনা মাচাদো জর্জ ডব্লিউ বুশের সাথে দেখা করার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করেছেন এবং একই সাথে হুগো শ্যাভেজের বিরোধিতা করেছেন এবং এখন নিকোলাস মাদুরোরও। তার কোনও কাজ শান্তি বা গণতন্ত্রকে সমর্থন করে না।”
জনৈক আলি আবুমিনা লিখেছেন, “বিস্মিত! মার্কিন অর্থে পরিচালিত এক উগ্র দক্ষিণপন্থী সরকার পরিবর্তনকারী এজেন্টকে এই পুরস্কার দেওয়া হল।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন