
গত এক দশকে দেশে সরকারি স্কুলের সংখ্যা ৮% হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে লাফিয়ে বেড়েছে বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে প্রায় ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে বেসরকারি স্কুল। বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে সবথেকে বেশি সরকারী স্কুল বন্ধ হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশ।
কয়েক মাস আগে লোকসভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরী দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পরিসংখ্যান নিয়ে একটি তথ্য পেশ করেন। তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ সালে যেখানে দেশে সরকারি স্কুল ছিল ১১ লক্ষ ৭ হাজার ১০১ট। ২০২৩-২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৬০টিতে। অর্থাৎ, মোট ৮৯ হাজার ৪৪১টি সরকারি বিদ্যালয় গত ১০ বছরে বন্ধ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সরকারি স্কুল বন্ধ হয়েছে মধ্যপ্রদেশে (২৯,৪১০টি)। এরপর এই তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (২৫,১২৬টি)। দেশের মোট বন্ধ হওয়া স্কুলের প্রায় ৬১ শতাংশই এই দুটি রাজ্যের।
একই সময়ে, বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে ৪২ হাজার ৯৪৪টি। আগে যা ছিল ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৬৪, এখন তা হয়েছে ৩ লক্ষ ৩১ হাজার ১০৮টি। কেবলমাত্র উত্তরপ্রদেশেই ১৯,৩০৫টি বেসরকারি বিদ্যালয় বেড়েছে, যা জাতীয় বৃদ্ধির প্রায় ৪৫%।
রাজ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ:
মধ্যপ্রদেশে সরকারি স্কুল ২৪.১% হ্রাস পেয়েছে (আগে ছিল ১ লক্ষ ২১ হাজার ৮৪৯। এখন হয়েছে ৯২ হাজার ৪৩৯। স্কুল বন্ধ হয়েছে ২৯ হাজার ৪১০ টি )
জম্মু ও কাশ্মীরে ২১.৪% হ্রাস (২৩ হাজার ৮৭৪ থেকে হয়েছে ১৮ হাজার ৭৫৮। অর্থাৎ ৫ হাজার স্কুল কমেছে।)
ওড়িশায় ১৭.১% হ্রাস (৫৮ হাজার ৬৯৭ থেকে ১০ হাজার কমে হয়েছে ৪৮ হাজার ৬৭১।)
উত্তরপ্রদেশে ১৫.৫% হ্রাস (১ লক্ষ ৬২ হাজার ২২৮ থেকে কমে হয়েছে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ১০২টি। অর্থাৎ ২৫ হাজারের বেশী স্কুল বন্ধ হয়েছে)
তবে বিহারের ক্ষেত্রে চিত্রটা একটু আলাদা। এই রাজ্যে গত ১০ বছরে সরকারি স্কুলের সংখ্যা ৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বিহারে সরকারি স্কুলের সংখ্যা এখন ৭৮ হাজার ১২০টি।
বেসরকারি বিদ্যালয়ের দ্রুত প্রসার:
১০টি রাজ্যে বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা জাতীয় গড় ১৪.৯% বৃদ্ধিকে ছাপিয়ে গেছে।
বিহার সবচেয়ে এগিয়ে – ১৭৯.১৪% বৃদ্ধি (৩,২৮৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯,১৬৭)
ওড়িশা – ৮০.৩৬% বৃদ্ধি (৩,৩৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬,০৪২)
উত্তরপ্রদেশ – ২৪.৯৬% বৃদ্ধি (৭৭,৩৩০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৬,৬৩৫)
তবে তিনটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বেসরকারি স্কুল কমেছে:
মেঘালয় – ৫.৩৬% হ্রাস (২,২৭৪ → ২,১৫২)
দিল্লি – ২.৮৮% হ্রাস (২,৬৪১ → ২,৫৬৫)
হিমাচল প্রদেশ – ০.২৭% হ্রাস (২,৬১৪ → ২,৬০৭)
মন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরীর কথায়, বিদ্যালয় খোলা বা বন্ধ করা রাজ্য সরকারের অধীনে। RTE আইনের অধীনে প্রতিটি শিশুকে তার নির্ধারিত এলাকার মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরের নীতি আয়োগের এক রিপোর্টে শিক্ষার মানোন্নয়নে স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয়। তারপরেও দেশে যে হারে সরকারি স্কুলের সংখ্যা কমছে তা উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন