
ভারতীয় সংবিধান থেকে 'সমাজতান্ত্রিক' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (RSS) নেতা দত্তাত্রেয় হোসাবলে। যার তীব্র বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে ‘জরুরি অবস্থার ৫০ বছর’ শীর্ষক এক আলোচনায় বিতর্কিত মন্তব্য করেন ওই সঙ্ঘ নেতা। তিনি বলেন, 'জরুরী অবস্থার সময় কংগ্রেস গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। সেই সময় সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে শব্দ যুক্ত করা হয়েছিল, তা কি এখনও রেখে দেওয়া উচিত? বাবাসাহেব আম্বেদকর যে সংবিধানের প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলেন তাতে কখনও এই শব্দগুলি ছিল না।'
সঙ্ঘের নেতার কথায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়, আরএসএস সর্বদা বাবাসাহেব আম্বেদকরের ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে। যখন সংবিধান গৃহীত হয়েছিল, তখন আরএসএস এটি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা কেবল এর বিরোধিতা করেনি, এটি পুড়িয়েও দিয়েছিল,"
কংগ্রেস আরও জানিয়েছে, বিজেপি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিল সংবিধান পুনরায় লেখার জন্য তাদের ৪০০ টিরও বেশি আসনের প্রয়োজন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে সাধারণ মানুষ তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালে সংবিধান সংশোধনী আইনের মাধ্যমে (৪২তম সংবিধান সংশোধন) সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'সমাজতান্ত্রিক' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দ দুটি যোগ করা হয়েছিল। দেশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরী অবস্থা চলাকালীন সংবিধানে এই সংশোধন করা হয়া
আর এস এস নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। এক এক্স বার্তায় এদিন রাহুল গান্ধী জানান, "আরএসএসের মুখোশ আবার খুলে গেছে। সংবিধান তাদের অপমান করে কারণ এটি সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচারের কথা বলে। আরএসএস-বিজেপি সংবিধান চায় না, তারা মনুস্মৃতি চায়। তারা বহুজন এবং দরিদ্রদের তাদের অধিকার কেড়ে নিয়ে আবার দাস বানাতে চায়। তাদের আসল এজেন্ডা হল তাদের কাছ থেকে সংবিধানের মতো একটি শক্তিশালী অস্ত্র কেড়ে নেওয়া। আরএসএসের স্বপ্ন দেখা বন্ধ করা উচিত - আমরা তাদের কখনই সফল হতে দেব না। প্রতিটি দেশপ্রেমিক ভারতীয় তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সংবিধান রক্ষা করবে।"
আর এস এস নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও। এক এক্স বার্তায় রমেশ জানিয়েছেন, "আরএসএস কখনও ভারতের সংবিধান গ্রহণ করেনি। ১৯৪৯ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে তারা ডঃ আম্বেদকর, নেহেরু এবং এর প্রণয়নের সাথে জড়িত অন্যান্যদের আক্রমণ করেছে। আরএসএসের নিজস্ব ভাষায়, সংবিধান মনুস্মৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল না।"
ওই এক্স বার্তায় রমেশ আরও বলেন, "আরএসএস এবং বিজেপি বারবার নতুন সংবিধানের আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় মিঃ মোদীর প্রচারের স্লোগান ছিল এটি। ভারতের জনগণ এই স্লোগানকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবুও আরএসএস-এর লোকজন সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের দাবি অব্যাহত রেখেছে।"
তিনি বলেন, "ভারতের প্রধান বিচারপতি নিজেই ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে আরএসএসের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার দ্বারা উত্থাপিত এই বিষয়টির উপর একটি রায় দিয়েছেন। তাকে এটি পড়ার জন্য কষ্ট নিতে অনুরোধ করা কি অতিরিক্ত দাবি হবে?"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন