ভারতের শহরাঞ্চলের ৪০ শতাংশ মহিলা নিজেদের নিরাপদ (Not to Safe or Unsafe) মনে করেন না। সদ্য প্রকাশিত দ্য ন্যাশনাল অ্যানুয়াল রিপোর্ট অ্যান্ড ইনডেক্স অন ওমেন’স সেফটি, নারী ২০২৫ (The National Annual Report and Index on Women’s Safety, NARI 2025) সমীক্ষা থেকে এই তথ্য জানা গেছে। দেশের ৩১টি শহরের ১২,৭৭০ জন মহিলা এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে নারী নিরাপত্তায় সব থেকে পিছিয়ে থাকা শহরের মধ্যে নাম আছে কলকাতার।
নারী নিরাপত্তার দিক থেকে শীর্ষে আছে কোহিমা, বিশাখাপত্তনম, ভুবনেশ্বর, আইজল, গ্যাংটক, ইটানগর এবং মুম্বাই। অন্যদিকে নারী নিরাপত্তায় সব থেকে পিছিয়ে থাকা শহরের মধ্যে আছে পাটনা, জয়পুর, ফরিদাবাদ, দিল্লি, কলকাতা, শ্রীনগর এবং রাঁচি।
দেশজুড়ে এই সমীক্ষা চালানোর পর বৃহস্পতিবার এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ‘জাতীয় সুরক্ষা’র মান ধরা হয়েছিল ৬৫। এই মানের হিসেবে মোট পাঁচটি বিভাগে এই সমীক্ষাকে ভাগ করা হয়েছিল। যার মধ্যে আছে ‘মানের অনেক ওপরে’ (Much Above), ‘মানের ওপরে’ (Above), ‘সম মান’ (At), ‘মানের নীচে’ (Below), ‘মানের অনেক নীচে’ (Much Below)।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৭ শতাংশ মহিলা মনে করেন তাঁরা ২০২৪ সালে প্রকাশ্যে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। ২৪ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এই হার ১৪ শতাংশ। প্রতিবেশী এলাকা বা গণপরিবহনে হেনস্থার শিকার হয়েছেন যথাক্রমে ৩৮ ও ২৯ শতাংশ মহিলা। বিশেষ করে ১৮ থেকে ২৪ বছরের মহিলারা বেশি হেনস্থার শিকার হয়েছেন।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪০ শতাংশ মহিলা মনে করেন তাঁরা নিজেদের শহরে সুরক্ষিত নন। বিশেষ করে রাতের বেলা তাঁরা নিজেদের বেশি অসুরক্ষিত মনে করেন। বিশেষ করে গণপরিবহন, উৎসব অনুষ্ঠানে তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করেন না। যদিও ৮৬ শতাংশ মহিলা মনে করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁরা যথেষ্ট সুরক্ষিত। বিশেষ করে দিনের বেলায়। যদিও এই পরিস্থিতি রাতের বেলা বদলে যায় বলেই তাঁদের অভিমত।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, মাত্র ২২ শতাংশ মহিলা কাজের ক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার হবার পর কর্তৃপক্ষর কাছে তাঁদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। অধিকাংশ মহিলাই এক্ষেত্রে আরও হেনস্থার আশঙ্কা করে এবং সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে বিষয়গুলি নিয়ে অভিযোগ করেন না। রিপোর্ট অনুসারে মাত্র ১৬ শতাংশ অভিযোগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই রিপোর্ট প্রকাশ করে ন্যাশনাল কমিশন ফর ওমেন (NCW)-এর চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর জানিয়েছেন, মহিলারা যখন নিজেদের অসুরক্ষিত মনে করেন তখন তাঁরা নিজেদের গুটিয়ে নেন। যার ফলে শুধু যে মহিলাদের ক্ষতি হয় তাই নয়, দেশের উন্নতিও বাধাপ্রাপ্ত হয়। তিনি আরও বলেন, মহিলাদের শুধুমাত্র অপরাধ থেকে রক্ষা করাই আমাদের একমাত্র কাজ নয়। তাদের সাইবার ক্রাইম, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং মানসিক হেনস্থা থেকেও রক্ষা করা প্রয়োজন।
বিজয়া রাহাতকর জানিয়েছেন, এই রিপোর্ট তৈরি করেছে পিভ্যালু অ্যানালিটিক্স (PValue Analytics) এবং প্রকাশ করেছে গ্রুপ অফ ইন্টেলেকচুয়ালস অ্যান্ড অ্যাকামেডিশিয়ানস (Group of Intellectuals and Academicians – GIA)।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন