
১ আগস্ট থেকেই চেপেছিল ২৫ শতাংশ শুল্ক। আর ২৭ আগস্ট সকাল ৯টা ৩১ থেকে চাপলো আরও ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যা বলেছিলেন তা করে দেখালেন। যার ফল ভুগতে হবে ভারতকে, ভারতের রফতানিকারদের। শুল্ক যুদ্ধের মাঝে পড়ে একদিকে যেমন ভারতের ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল, অন্যদিকে প্রতিযোগিতার বাজারে লাভবান হবার সম্ভাবনা চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, জাপান, ইন্দোনেশিয়ার মত দেশগুলোর। যারা রফতানির বাজারে ভারতের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক যুদ্ধের আবহে মঙ্গলবার ধস নেমেছিল ভারতীয় শেয়ার বাজারে। গতকাল সেনসেক্স বন্ধ হয়েছে ৮৪৯.৩৭ পয়েন্ট নেমে এবং নিফটি ৫০ বন্ধ হয়েছে ২৫৫.৭০ পয়েন্ট নেমে। বুধবার গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে শেয়ার বাজার বন্ধ থাকার কারণে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও বাজার বিশেষজ্ঞদের অনুমান আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফের ধস নামবে শেয়ার বাজারে।
শেয়ার বাজারে ধস নামার পাশাপাশি ধস নেমেছে ভারতীয় টাকার দামেও। বুধবার এই প্রতিবেদন লেখার সময় ১ আমেরিকান ডলারের অনুপাতে ভারতীয় টাকার দাম দাঁড়িয়েছে ৮৭ টাকা ৮০ পয়সায়। যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বনিম্ন। এই নিয়ে পরপর ছ’দিন একটানা ভারতীয় টাকার দামে পতন অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন শুল্কের প্রভাবেই ভারতীয় টাকার দামে এই পতন।
শেয়ার বাজার, টাকার দামে পতন ছাড়াও ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রও। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চড়া শুল্কের কারণে ভারতের রফতানি বাণিজ্য প্রভাবিত হলে তার প্রভাব যেমন পড়বে বিভিন্ন উৎপাদন সংস্থায় তেমনই প্রভাব পড়বে কাজের বাজারেও। বিশেষ করে টেক্সটাইল, লেদার, ফুটওয়ার, জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি ক্ষেত্রে। এর প্রভাবে কর্মচ্যুত হতে পারেন কয়েক লক্ষ মানুষ।
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (FIEO)-এর সূত্র অনুসারে তিরুপ্পুর, নয়দা, সুরাতের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই উৎপাদন স্থগিত করেছে। ফিও জানিয়েছে, চড়া মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় ভিয়েতনাম, বাংলাদেশের কাছে পিছিয়ে পড়বে।
এই মুহূর্তে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যা চিনের জন্য ৩০ শতাংশ, ভিয়েতনামের জন্য ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ, জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ। ভারত থেকে আমেরিকায় যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করা হয় এই শুল্কের কারণে তার ৬৬ শতাংশ প্রভাবিত হবে। শেষ বছরে ভারত আমেরিকায় রফতানি করেছিল প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ইউ এস ডলারের পণ্য। যা বর্তমান আর্থিক বছরে কমতে পারে ৪৩ শতাংশ।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা বেশিরভাগ ভারতীয় পণ্যের (গত বছর যা ছিল ৮৭.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের) ওপর এখন উচ্চ শুল্ক আরোপের সম্মুখীন হতে হবে, যদিও স্মার্টফোন সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আপাতত বাদ দেওয়া হবে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের অনুমান অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে কমপক্ষে ৪৫,০০০ কোটি টাকার ভারতীয় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে, যেখানে "সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত" রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে থাকবে পশ্চিম্বং। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (FIEO)-এর আঞ্চলিক চেয়ারম্যান (পূর্ব) এবং একজন বিশিষ্ট সামুদ্রিক পণ্যের রপ্তানিকারক যোগেশ গুপ্ত সংবাদস্নস্থাকে বলেন, "শ্রম-নিবিড় শিল্পগুলি তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে। সামুদ্রিক পণ্যের রপ্তানিতে, পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক রফতানির বড়ো অংশ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।"
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক যুদ্ধের আবহে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, “আমাদের সকলেরই শুধুমাত্র 'ভারতে তৈরি' পণ্য কেনার মন্ত্র অনুসরণ করা উচিত।” মোদী মঙ্গলবার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দেশীয় পণ্যের প্রচারমূলক বড় বড় বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে উৎসাহিত করে একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, “আমাদের উপর চাপ [শুল্কের কারণে] বাড়তে পারে, কিন্তু আমরা তা সহ্য করব।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন