
বুধবার থেকে ভারতের উৎপাদিত জিনিসের উপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক চাপালো আমেরিকা। মঙ্গলবারই ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে। এর ফলে সমস্যায় পড়তে চলেছেন ভারতীয় পণ্য রফতানিকারকেরা। ট্রাম্পের এই বিপুল পরিমাণ হারে শুল্ক চাপানোর ফলে অনুমান করা হচ্ছে পণ্যের রফতানির প্রায় ৫৫ শতাংশের উপর প্রভাব পড়তে পারে। যদিও শুল্ক মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই পথ খোঁজা শুরু করেছে নয়াদিল্লি।
মার্কিন নির্দেশ অস্বীকার করে রাশিয়া থেকে তেল কেনা জারি রেখেছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। এবিষয় সম্পর্কে অবগত আমেরিকা। সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের অর্থসচিব স্কট বেসেন্ট দাবি করেছিলেন, ‘‘ভারত সব সময় লাভ খোঁজে। রাশিয়া থেকে তেল কিনে ফের বিক্রি করছে তারা। সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল কিনে, তা আবার বিক্রি করাকে ভারতের স্বেচ্ছাচারিতা বলব। এটা কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়।’’
যদিও এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি নয়াদিল্লি। আমেরিকার অভিযোগ, তেলের টাকা ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহার করছে রাশিয়া। অর্থাৎ ভারত পরোক্ষ ভাবে রাশিয়াকে সাহায্য করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জানিয়েছেন, সেই কারণেই ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিল হোয়াইট হাউস, বুধবার সকাল (ভারতীয় সময় সাড়ে ৯টা) থেকে এই নয়া হারে শুল্ক নেওয়া হবে।
ট্রাম্পের শুল্ক বাড়াতেই আঘাত হেনেছে ভারতের শেয়ার বাজারে। সেনসেক্স এবং নিফটি ১ শতাংশ করে কমেছে। যাকত তিনমাসের মধ্যে দৈনিক পতনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এদিকে এই শুল্ক বৃদ্ধি জেরে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দাবি, এখনই এই শুল্ক থেকে কোনও অব্যাহতি মিলবে না, সেটা বুঝতে পেরেছে নয়াদিল্লি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ওই আধিকারিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রফতানিকারকেরা আর্থিক সহয়তা পাবেন।
উল্লেখ্য, সোমবার আমেরিকার বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন ভারতের বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকেরা। বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেদিনের বৈঠকে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সন্ধান, মাদক ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আলোচনা হয়েছিল।
শুল্ক বাড়ার ফলে আমেরিকায় ৮,৭০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের রফতানির প্রায় ৫৫ শতাংশের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ‘ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্টস প্রমোশন কাউন্সিল’-এর সভাপতি পঙ্কজ চড্ডা বলেন, ‘‘মার্কিন গ্রাহকেরা ইতিমধ্যেই নতুন করে ভারতীয় পণ্যের বরাত দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।’’ তাঁর আশঙ্কা, সেপ্টেম্বর থেকে ২০-৩০ শতাংশ রফতানি কমতে পারে। ভারত সরকারের তরফে আর্থিক সাহায্যের কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও চিন্তা কাটছে না রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের।
এদিকে ট্রাম্প শুল্ক বৃদ্ধি করায় বিকল্প পথ খোঁজা শুরু করেছে নয়া দিল্লি। রয়টার্স বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ভারত ৫০টি দেশকে চিহ্নিত করেছে, যেখানে তারা রফতানি বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষত, বস্ত্র, প্রসেস্ড ফুড, চামড়া, সামুদ্রিক পণ্য রফতানির বাজার আমেরিকা থেকে অন্যত্র সরাতে চাইছে ভারত।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ভারতের অর্থনীতি এবং কর্পোরেট মুনাফার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে তীব্র অর্থসঙ্কট দেখা দিতে পারে এশিয়ায়। গত সপ্তাহে ক্যাপিটাল ইকনমিক্স জানিয়েছিল, মার্কিন শুল্ক ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ০.৮ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে।
এদিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, শুল্কের জটিলতা না কাঁটা পর্যন্ত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কথা এগোবে না। কেন্দ্রের একটি সূত্রের খবর, আমেরিকা চায় ভারত কৃষিপণ্য, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক। কিন্তু তাতে মোটেই সহমত নয় ভারত। সূত্র জানাচ্ছে, তাড়াহুড়ো করে একপাক্ষিক চুক্তিতে নারাজ নয়াদিল্লি। যদিও এখনও পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ভারত এবং আমেরিকা।
অন্যদিকে, আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে দুরত্ব তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে চিন। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের নিন্দা করে বেজিং জানিয়েছে, ভারতের পাশে আছে তারা। এমনকি ভারত-চিন সম্পর্ক জোরদার করার কথাও বলছে বেজিং। এদিকে ভারতও চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের নয়া পথ খুলতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চিন সফর তারই অংশ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন