
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের স্ত্রী, আমেরিকার ফার্স্ট লেডি জিল বিডেনকে ৭.৫ ক্যারাট ওজনের একটি হীরে উপহার দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে হীরের দাম ২০ হাজার আমেরিকান ডলার বা ১৭ লক্ষ ১৫ হাজার ১৫৮ টাকা। ইউ এস স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর রিপোর্ট অনুসারে ২০২৩ সালে বিডেন পরিবারকে কোনও বিদেশী নেতার দেওয়া উপহারের মধ্যে এই উপহারই সর্বোচ্চ মূল্যের।
তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের জুন মাসে বিডেন পরিবারের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে এক ব্যক্তিগত ডিনারের সময় এই উপহার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট জো বিডেনকেও বেশ কিছু উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে ছিল একটি চন্দনকাঠের বাক্স, উপনিষদের দশটি নীতি সম্পর্কিত একটি বই, একটি মূর্তি এবং একটি বাতিদান। যার মোট মূল্য ৬,২৩২ আমেরিকান ডলার বা ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪৩৩ টাকা।
জানা গেছে, গুজরাটের সুরাটে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই হীরে তৈরি করা হয়েছিল। যা ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির স্মারক।
বিডেন পরিবারকে এর আগে ২০২২ সালেও বিশেষ উপহার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেবার নভেম্বর মাসে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে একটি ছবি উপহার দেন। যার দাম ১ হাজার আমেরিকান ডলার বা ৮৫ হাজার ৭৫৫ টাকা।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট-এর মুখ্য সহকারী কার্ট ক্যাম্পবেল এবং ইউ এস সেনেটর চার্লস স্কুমার। এঁদের দেওয়া হয়েছিল একটি ওয়াল হ্যাঙ্গিং এবং উটের হাড় দিয়ে তৈরি বাক্স। এই উপহারের মূল্য যথাক্রমে ৮৫০ আমেরিকান ডলার বা ৭২ হাজার ৮৯৩ টাকা এবং ১২৫ আমেরিকান ডলার বা ১০ হাজার ৭১৯ টাকা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়া আর যাঁদের কাছ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেন মূল্যবান উপহার পেয়েছেন তার মধ্যে আছে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভা। যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে যে উপহার দিয়েছিলেন তার মূল্য ১৪ হাজার ০৬৩ আমেরিকান ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা দাঁড়ায় ১২ লক্ষ ৫ হাজার ৯৭৯ টাকা।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক উল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনকে দিয়েছিলেন একটি স্মারক ফোটো অ্যালবাম। যার দাম ৭ হাজার ১০০ আমেরিকান ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার দাম ৬ লক্ষ ৮ হাজার ৮৮১ টাকা। এছাড়াও মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী তাঁকে একটি স্ট্যাচু উপহার দিয়েছিলেন। যার মূল্য ৩ হাজার ৪৯৫ আমেরিকান ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৭২৬ টাকা।
সংবাদসংস্থা এপি-র প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেন ব্রুনেইয়ের সুলতানের কাছ থেকে ৩,৩০০ ডলার মূল্যের একটি রূপার বাটি উপহার পেয়েছেন। ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন ৩,১৬০ ডলার মূল্যের একটি স্টার্লিং রূপার ট্রে এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে পেয়েছেন ২,৪০০ ডলার মূল্যের একটি কোলাজ।
আমেরিকান আইন অনুসারে কোনও আধিকারিক যদি কোনও বিদেশি নেতার কাছ থেকে ৪৮০ আমেরিকান ডলার বা ভারতীয় ৪১,১৬৩ টাকার বেশি মূল্যের কোনও উপহার পান তা সরকারের কাছে জানাতে হয়।
ফেডারেল রেজিস্টারের সংস্করণে শুক্রবার যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিস অফ প্রোটোকল অনুসারে, সিআইএ-র বেশ কয়েকজন কর্মচারী এই সময়ে ঘড়ি, সুগন্ধি এবং গয়না জাতীয় বিলাসবহুল উপহার পেয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এগুলির প্রায় সবই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে নষ্ট করে ফেলা এইসব উপহারের মোট মূল্য প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার আমেরিকান ডলার।
হোয়াইট হাউসের এই তথ্য সামনে আসতেই এই বিষয় ট্যুইট করে কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। নিজের এক্স হ্যান্ডেল (পূর্বতন ট্যুইটার) পোষ্টে তিনি লেখেন, "২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী জিল বাইডেনকে ২০,০০০ ডলারের একটি হীরার আংটি উপহার দিয়েছিলেন। আর ভারতীয় করদাতারা এখন এটি জানতে পারলেন তার একমাত্র কারণ হল হোয়াইট হাউস এটি ঘোষণা করেছে। চমৎকার।"
এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন এক আরটিআই আন্দোলনকারী। অজয় বোস নামক ওই ব্যক্তি মহুয়া মৈত্রের ওই পোষ্টে এই প্রসঙ্গে তাঁর করা আরটিআই-এর ছবি সহ লিখেছেন - "সেই সময় করদাতাদের টাকায় উপহার দেওয়া এই হীরার আংটির দাম সম্পর্কে জানতে আমি বিদেশ মন্ত্রণালয়ে আরটিআই দায়ের করেছিলাম। কিন্তু ওই তথ্য দিতে অসম্মতি জানানো হয় এবং বলা হয় এতে অন্য কোনও দেশের সাথে সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন