একদিকে দেশে যেমন সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুল বন্ধের হিড়িক পড়েছে, তেমনই হু-হু করে কমছে মিড ডে মিল (বর্তমানে যার নাম পি এম পোষণ) দেয় এমন স্কুলের সংখ্যাও। গত পাঁচ বছরে দেশে এমন ৮৪ হাজার ৪৫৩টি স্কুল বন্ধ হয়েছে। শতাংশের হিসেবে ৭.৫ শতাংশ। কেন্দ্রের রিপোর্টেই এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। উল্লেখ্য, এই সময়কালের মধ্যেই দেশে অতিমারি চলছিল।
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন রাজ্যসভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরীকে মিড ডে মিল নিয়ে প্রশ্ন করেন আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং (প্রশ্ন নম্বর ১৯৩৯)। তখনই এই তথ্য প্রকাশ করেন মন্ত্রী। গত ১৭ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেওয়া উত্তর অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে মিড-ডে মিল দেয় এমন স্কুলের সংখ্যা ছিল ১১ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৮৫। যা ২০২৪-২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩৩২। এর মধ্যে প্রথম বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ সালের মধ্যেই এমন ৩৫ হাজার ৫৭৪টি স্কুল বন্ধ হয়েছে।
বন্ধ হওয়া স্কুলের সংখ্যা সবথেকে বেশি উত্তরপ্রদেশে। সেখানে আগে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার স্কুলে মিড ডে মিল দেওয়া হতো। এখন দেওয়া হয় ১ লক্ষ ৪১ হাজার স্কুলে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে মিড ডে মিল দেয় এমন স্কুলের সংখ্যা কমেছে ২৬ হাজার।
এরপরেই রয়েছে আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশ। সেখানে পাঁচ বছরে মিড ডে মিল দেয় এমন স্কুলের সংখ্যা কমেছে প্রায় ২৫ হাজার। আগে এই রাজ্যে ১ লক্ষ ১২ হাজার স্কুলে মিড ডে মিল দেওয়া হতো। এখন ৮৮ হাজার ২০৪টি স্কুলে দেওয়া হয়।
এরপর রয়েছে আরও এক বিজেপি শাসিত রাজ্য অসম। সেখানে ২০২০-২১ সালে ৫৩ হাজার ৪২৭টি স্কুলে মিড ডে মিল দেওয়া হলেও, বর্তমানে ৪৪ হাজার ১০৬টিতে দেওয়া হয়। পাঁচ বছরে এমন স্কুল কমেছে ৯ হাজার ৩২১টি।
অর্থাৎ পাঁচ বছরে বিজেপি শাসিত এই তিন রাজ্যেই মিড ডে মিল দেয় এমন স্কুলের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৫৯ হাজার ৪০০টি।
পশ্চিমবঙ্গে এই পাঁচ বছরে এমন ২ হাজার ১৫৬টি স্কুল বন্ধ হয়েছে। ২০২০-২১ সালে রাজ্যে এমন স্কুলের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৯৪৫। ২০২৪-২৫ সালে তা কমে হয়েছে ৮১ হাজার ৭৮৯।
তবে কেন এই স্কুলগুলি বন্ধ হয়েছে, তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, শিশুদের মুখে রান্না করা গরম ও পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনগুলির।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ বা পিএম পোষণ প্রকল্পে (পূর্বতন মিড ডে মিল) টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার সেই প্রকল্প কার্যকর করে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে কেন্দ্র বরাদ্দ করেছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
গত এপ্রিলে মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রে মাথাপিছু বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য প্রতি দিন মাথাপিছু বরাদ্দ ৬.১৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬.৭৮ টাকা করা হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য প্রতিদিন মাথাপিছু বরাদ্দ ৯.২৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০.১৭ টাকা করা হয়।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন