

দেশে সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত প্রায় ৮ হাজার স্কুলে নেই কোনও পড়ুয়া। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক দেশের সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত স্কুলগুলির এই বেহাল চিত্র তুলে ধরেছে। যা প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশে মোট ৭,৯৯৩টি সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত স্কুল রয়েছে, যেখানে একটিও পড়ুয়া নেই। তবু সেই স্কুলগুলিতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক। এর মধ্যে একাই পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়া-শূন্য স্কুলের সংখ্যা ৩,৮১২টি। অথচ এই সব স্কুলে কর্মরত আছেন প্রায় ১৭,৯৬৫ জন শিক্ষক। অর্থাৎ দেশের মোট ‘পড়ুয়া-শূন্য স্কুল শিক্ষক’-এর ৯০ শতাংশেরও বেশি পশ্চিমবঙ্গের ভাগে পড়ছে।
কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের পরেই রয়েছে তেলেঙ্গানা। সে রাজ্যে ২,২৪৫টি স্কুল ভর্তি শূন্য এক বছরে। এরপর তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৪৬৩টি স্কুল)। তুলনামূলকভাবে তেলেঙ্গানার এই শূন্য স্কুলগুলিতে কাজ করছেন ১,০১৬ জন শিক্ষক, আর মধ্যপ্রদেশে ২২৩ জন।
একজন সিনিয়র শিক্ষা মন্ত্রক আধিকারিক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “স্কুল শিক্ষা রাজ্যের বিষয়। তাই যেসব রাজ্যে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার মারাত্মকভাবে কমে গেছে, তাদের উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।”
যদিও অন্য রাজ্যগুলির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেরালায় সরকারি সহায়তা প্রাপ্ত একটিও স্কুলে পড়ুয়া শূন্য নেই। বরং গত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে, অনেক অভিভাবক বেসরকারি স্কুল থেকে সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নতি ও শিক্ষকদের সক্রিয়তা কেরালাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রক।
এছাড়া হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, আসাম, ত্রিপুরা, সিকিম, নাগাল্যান্ড, ছত্তীসগঢ় ও হিমাচল প্রদেশে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে একটিও পড়ুয়া-শূন্য স্কুল নেই। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যেও— যেমন দিল্লি, পুদুচেরি, লাক্ষাদ্বীপ, আন্দামান–নিকোবর, দমন ও দিউ, দাদরা–নগর হাভেলি ও চণ্ডীগড়— কোনও ভর্তিশূন্য স্কুলের খবর মেলেনি।
রিপোর্টে আরও এক উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে— দেশে এখনও এক লক্ষেরও বেশি স্কুল রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র একজন শিক্ষক কর্মরত। সেই স্কুলগুলিতে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ৩৩ লক্ষ। এক শিক্ষক-নির্ভর স্কুলের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড এবং মধ্যপ্রদেশ। ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে এই ধরনের স্কুল ছিল ১ লক্ষ ১৮ হাজার ১৯০টি। ২০২৩–২৪ সালে তা সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৯৭১টি।
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরী সম্প্রতি সংসদে স্বীকার করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুটের হার ভয়াবহ হারে বেড়েছে। নবম থেকে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়ার স্কুলছুটের হার ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষে যেখানে ছিল মোট ১৩.৮ শতাংশ, ২০২৩–২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৭ শতাংশ। শুধুমাত্র ছাত্রদের ক্ষেত্রেই এই হার ২১ শতাংশে পৌঁছেছে। আসামে স্কুলছুট ২৫ শতাংশ, বিহারে ২৩ শতাংশ এবং কর্নাটকে ২২ শতাংশ।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন