
শেয়ার বাজারের সাম্প্রতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিরাট ক্ষতির মুখে লাইফ ইন্সিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (LIC)। তথ্য অনুসারে, এই সংস্থার কাছে থাকা বিভিন্ন শেয়ারের দাম গত দেড় মাসে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা নেমে গেছে।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডিসেম্বর ২০২৪ ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন রেজিস্ট্রিকৃত কোম্পানীতে এলআইসি-র বিনিয়োগের বাজার মূল্য ছিল টাকা ১৪.৭২ ট্রিলিয়ন। যা ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৮৭ ট্রিলিয়ন টাকা। অর্থাৎ বিগত দেড় মাসে এই বিনিয়োগের বাজার মূল্য কমেছে ৮৪,২৪৭ কোটি টাকা। শতকরার হিসেবে যা কমেছে ৫.৭ শতাংশ।
ডিসেম্বর ২০২৪ ত্রৈমাসিকের হিসেবে অনুসারে, মোট ৩৩০টি শেয়ারের ওপর হিসেব করা হয়েছে। যেখানে এলআইসি-র বিনিয়োগ আছে। যা শেয়ার বাজারের সমস্ত শেয়ারের মোট বাজার মূল্যের ৬৬ শতাংশ। বিগত দেড় মাসে শেয়ার বাজারে লাগাতার পতনের জেরে এইসব শেয়ারের অনেকগুলিরই দামে ভারী পতন ঘটেছে। কোনও কোনও শেয়ারের দাম ১০ শতাংশেরও কমেছে।
এই তালিকায় আছে আইটিসি, লারসেন অ্যান্ড ট্যুব্রো, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, টিসিএস, জিও ফিনান্সিয়াল প্রভৃতি শেয়ার। এলআইসি-র হাতে থাকে এইসব সংস্থার শেয়ারের দাম কমেছে যথাক্রমে ১১,৮৬৩ কোটি টাকা, ৬,৭১৩ কোটি টাকা এবং ৫,৬৪৭ কোটি টাকা, ৩,৯১৪ কোটি টাকা এবং ৩,০৩০ কোটি টাকা বা মোট ৩১,১৬৭ কোটি টাকা। শুধুমাত্র প্রথম তিনটি সংস্থায় এলআইসি-র মোট বিনিয়োগের অনুপাতে কমে যাওয়া বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৯ শতাংশে।
এছাড়াও এই তালিকাতে এরকম ২৬টি সংস্থা আছে যেখানে এলআইসি-র মোট বিনিয়োগের বাজার মূল্য কমেছে ১০০০ কোটি টাকার বেশি। এইচসিএল টেকনোলজি, জেএসডব্লু এনার্জি, আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জোন, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক প্রভৃতি সংস্থায় এলআইসির মোট বিনিয়োগের বাজার মূল্য কমেছে ২০০০ থেকে ৪০০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি, ইন্সিওরেন্স কোম্পানির শেয়ারে এলআইসি-র বিনিয়োগের বাজার মূল্য কমেছে ২২ শতাংশ বা ১৮,৩৮৫ কোটি টাকা।
ইনফরমেশন টেকনোলজি, ইনফ্রাস্ট্রাকচার, পাওয়ার জেনারেশন, ফার্মা প্রভৃতি সংস্থায় এলআইসি-র মোট বিনিয়োগের বাজার মূল্য কমেছে ৪০০০ কোটি টাকার বেশি।
যদিও বাজাজ ফিনান্স, মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ভারতী এয়ারটেল, বাজাজ ফিনসার্ভিস, জেএসডব্লু স্টিল প্রভৃতি সংস্থা থেকে গত দেড় মাসে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখেছে এলআইসি। লাভ দিয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং টাটা কনজিউমার প্রোডাক্টসও।
এর আগে, গত বছরের ২১ নভেম্বর আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দামে ধস নামার ফলে এলআইসি-র হাতে থাকা সাতটি আদানি গ্রুপ কোম্পানির শেয়ারের মোট বাজার মূল্যের দাম কমে যায় প্রায় ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
ওইদিন গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন গ্রুপের শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ২৩% পর্যন্ত কমেছিল। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগের পরে শেয়ারের দামে এই পতন ঘটে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে, এলআইসির পোর্টফোলিওতে আদানি গোষ্ঠীর সাতটি শেয়ারের অংশীদারিত্ব ছিল। যার মধ্যে ছিল আদানি এন্টারপ্রাইজেস, আদানি পোর্টস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি এনার্জি সলিউশনস, আদানি টোটাল গ্যাস, এসিসি এবং অম্বুজা সিমেন্টস। একদিনে এই কোম্পানিগুলিতে এলআইসির বিনিয়োগের মোট বাজার মূল্য কমে প্রায় ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন