
আজ ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। ঠিক ৮ বছর আগে ২০১৭ সালের এই দিনেই বেঙ্গালুরুতে নিজের বাড়ির সামনে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ (Gauri Lankesh)। আজ তাঁর নবম হত্যাবার্ষিকী। যদিও শুধু সাংবাদিক হিসেবে গৌরী লঙ্কেশকে বিশেষিত করলে বোধহয় তাঁর প্রতি ন্যায়বিচার করা হবে না। কারণ সমাজজীবনে মানবাধিকার, উগ্র হিন্দুত্ববাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াইতে লঙ্কেশের অবদান আরও অনেক অনেক বেশি। তাঁকে হত্যা করা হলেও, তাঁর অবদানকে হত্যা করা সম্ভব নয়। তাই তো অভিনেতা প্রকাশ রাজের কথায় বলতে হয় - 'এটা সত্যি যে গৌরীকে ওরা হত্যা করেছে, কিন্তু এটাও সত্যি যে গৌরী লঙ্কেশ মৃত নয়।'
কন্নড় ভাষায় প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘গৌরী লঙ্কেশ পাত্রিক’ পত্রিকার সম্পাদক এবং কোমু কোমু সৌহার্দা বেদিকে (সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফোরাম) এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন গৌরী লঙ্কেশ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা, নকশালদের মূল ধারায় আনার লক্ষ্যে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি।
২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নিজের বাড়ির সামনেই আততায়ীরা গুলি করে হত্যা করে উগ্র দক্ষিণপন্থা ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের কড়া সমালোচক গৌরী লঙ্কেশকে। এর দু'বছর আগে ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে খুন হন বামপন্থী রাজনীতিবিদ গোবিন্দ পানসারে এবং ওই বছরই আগস্ট মাসে হত্যা করা হয় বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ এম এম কালবুর্গিকে। ২০১৩-র আগস্ট মাসে খুন হয়েছিলেন সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকর। এই তিন হত্যাকান্ডই হয়েছে একই কায়দায়, হেলমেটে মুখ ঢাকা আততায়ীরা মোটরবাইকে করে আসে এবং গুলি করে। গৌরী লঙ্কেশ এবং কালবুর্গির ক্ষেত্রে একই বন্দুকও ব্যবহার করা হয়েছে।
গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকান্ডে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকে দেওয়া চার্জশিটে বলা হয়েছে, এই হত্যার জন্য দায়ী হিন্দু চরমপন্থী সংগঠন সনাতন সংস্থা। সিট জানায়, গৌরী লঙ্কেশের হত্যাকান্ড একটি সংগঠিত অপরাধ এবং তাঁকে হত্যা করার আগে পাঁচ বছর ধরে বেঙ্গালুরু, বেলগাঁও অঞ্চলে এর পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। ২০১৮ সালের নভেম্বরে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হলেও ২০২২ সালের জুনে এই হত্যাকান্ডের বিচারপর্ব শুরু হয়।
৯,২৩৫ পাতার চার্জশিটে মোট ১৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ঘটনার মূল চক্রী হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয় অমল কালে-র। এছাড়াও শ্যুটার পরশুরাম ওয়াঘমারেকে, অমিত দেগওয়েকর এবং সুজিত কুমারের নামও উঠে আসে। ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি ১ জন বিকাশ পাতিল পলাতক। কিন্তু দুঃখজনক, ১৭ জনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত।
তদন্ত থেকে জানা যায়, শুধু গৌরী লঙ্কেশ, কালবুর্গী, নরেন্দ্র দাভোলকর এবং গোবিন্দ পানসারে ছাড়াও এই তালিকায় নাম ছিলো নাট্যকার-অভিনেতা গিরিশ কারনাডের, রাজনীতিক সাহিত্যিক বিটি ললিতা নায়েক, বীরভদ্র চান্নামাল্লা এবং সি এস দ্বারকানাথ-এর। গৌরী লঙ্কেশকে মূলত তাঁর লেখা এবং বক্তৃতায় হিন্দুত্ববাদের তীব্র বিরোধিতা করার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এছাড়াও যাদের নাম ছিল তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কড়া সমালোচক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন