Write Off: ১০ বছরে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ঋণ মকুব ১৬ লক্ষ কোটি টাকার বেশি - RTI-র উত্তরে জানালো RBI

People's Reporter: RBI-এর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট সাড়ে ১৬ লক্ষ কোটি টাকার বেশি অনাদায়ী ঋণের হিসেব বিভিন্ন ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকীফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

শেষ দশ বছরে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলোর হিসেবের খাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে ১৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৩১০ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণের হিসাব। যাকে পোশাকি ভাষায় বলা হয় ‘রাইট অফ’। সম্প্রতি এক আরটিআই-এর উত্তরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এই তথ্য জানিয়েছে। আরবিআই-এর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট সাড়ে ১৬ লক্ষ কোটি টাকার বেশি অনাদায়ী ঋণের হিসেব দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। এই আরটিআই-এর উত্তর দেখিয়ে দিয়েছে, আদপে ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে বলে সরকারের তরফে দাবি করা হলেও তা আদৌ কতটা সত্যি তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের মাহুতে আয়োজিত 'সংবিধান বাঁচাও' সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিযুক্ত করে এই প্রসঙ্গে বলেন, তিনি বড় শিল্পপতিদের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ মকুব করছেন, "কিন্তু দরিদ্র কৃষক, শ্রমিক এবং শিক্ষার্থীদের ঋণ মকুব করেননি"।

নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী প্রফুল্ল পি সারদার করা এক আরটিআই-এর উত্তরে আরবিআই জানিয়েছে, বিশাল অঙ্কের এই অনাদায়ী ঋণের মধ্যে থেকে মাত্র ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বা মাত্র প্রায় ১৬ শতাংশ উদ্ধার করা গেছে। বাকি ১৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৫১২ কোটি টাকা বা ৮৪ শতাংশ অনাদায়ী ঋণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি উদ্ধার করতে পেরেছে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি উদ্ধার করেছে মাত্র ৫৩,২৪৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন কো অপারেটিভ ব্যাঙ্ক কত টাকা উদ্ধার করেছে তার কোনও হিসেব নেই বলে জানিয়েছে আরবিআই।

প্রফুল্লের করা আরটিআই-এর উত্তরে আরবিআই থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত দশ বছরে সবথেকে বেশি রাইট অফ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকেই। যার পরিমাণ ১২ লক্ষ ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। একই সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে রাইট অফ করা হয়েছে ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে রাইট অফ হয়েছে ৬ হাজার ২০ কোটি।

যদিও খাতায় কলমে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে অনাদায়ী ঋণের এই হিসেব মুছে দেওয়া হয়েছে তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য অনুসারে, ব্যাঙ্কের খাতা থেকে হিসেব মোছা হলেও অনাদায়ী ঋণ আদায় চলবে। ২০২৪-এর নভেম্বর মাসে লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থদপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানান, “এই ধরনের ঋণ মকুবের ফলে ঋণগ্রহীতাদের দায় মকুব হয় না এবং তাই ঋণ মকুব করে দেওয়া হলেও ঋণগ্রহীতাদের তা কোনও উপকারে আসে না। ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধের জন্য দায়বদ্ধই থাকে এবং ব্যাংকগুলি পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপগুলি চালিয়ে যায়।”

মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার রাইট অফ করেছে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবথেকে কম। সবথেকে বেশি রাইট অফ হয়েছিল ২০২০-২১ আর্থিক বছরে। সেবার রাইট অফ করা হয় ২.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে রাইট অফ হয় ২.০৩ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে রাইট অফ হয় ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে সরকারি ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে রাইট অফের শীর্ষে আছে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (১৮,৩১৭ কোটি টাকা)। এরপরেই আছে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (১৮,২৬৪ কোটি টাকা) এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (১৬,১৬১ কোটি টাকা)। বেসরকারি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে এই তালিকার শীর্ষে আছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। যাদের রাইট অফের পরিমাণ ১১,০৩০ কোটি টাকা। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক রাইট অফ করেছে ৮,৩৪৬ কোটি টাকা এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক রাইট অফ করেছে ৬,৯১৮ কোটি টাকা।

সাধারণত ব্যাঙ্কের ব্যালেন্স শিটে অনুৎপাদক সম্পদ (নন পারফর্মিং অ্যাসেট – এনপিএ) কম দেখানোর লক্ষ্যে এই হিসেব মুছে দেওয়া হয়। এর ফলে ব্যাঙ্কের হিসেবে ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো দেখানো সম্ভব হয়। কোনও ঋণ ৯০ দিনের বেশি সময় অনাদায়ী থাকলে তা এনপিএ হয়ে যায়।

এর আগে ২০২৩-এর ২৬ জুলাই বাংলার ‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ ফোরামের তরফে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া এক চিঠিতে জানানো হয়, গত তিন বছরে প্রায় ৫,৮৬,৮৯১ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ রাইট অফ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। দেশের ব্যাঙ্কগুলি বিশাল অঙ্কের সেই ঋণের মধ্যে মাত্র ১,০৯,১৮৬ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে। গত তিন বছরে রাইট অফ করা অনাদায়ী সেই পাহাড়প্রমাণ ঋণের মধ্যে উদ্ধার হওয়া অর্থের পরিমাণ মাত্র ১৮.৬০ শতাংশ।

চিঠিতে এই বিষয়ে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে বলা হয়, “একদিকে কর্পোরেট সংস্থাগুলি কোটি কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করেই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। আর অন্যদিকে সম্পদ ক্রেতা সংস্থাগুলি জলের দরে সম্পদ কিনে নিচ্ছে। এতে দুই পক্ষই লাভবান হচ্ছে। এইভাবেই দিনের শেষে দেশের জনগণের টাকা জাতীয় কোষাগার থেকে লুঠ করা হচ্ছে।”

ছবি প্রতীকী
পুণ্য অর্জনে গিয়ে বারবার মর্মান্তিক ঘটনা! ১৯৫৪ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত একাধিক পদপিষ্টের সাক্ষী কুম্ভমেলা
ছবি প্রতীকী
Loan Write Off: শেষ ১০ বছরে কর্পোরেটদের পাহাড়প্রমাণ অনাদায়ী ঋণ মকুব কেন্দ্রের! তীব্র কটাক্ষ ইয়েচুরির
ছবি প্রতীকী
Write Off: 'জাতীয় কোষাগার লুঠ!', উদ্বেগ জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ব্যাঙ্ক বাঁচাও মঞ্চের চিঠি

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in