
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ২০২৪ সালের তুলনায় এ বছর ৮ ধাপ উপরে উঠলো ভারত। বর্তমানে ভারতের স্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১। প্রতি বছর প্রেস ফ্রিডম ডে-তে অর্থাৎ ৩ মে তে ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা Reporters Without Borders এই সূচক প্রকাশ করে। ২০২৪ সালে ভারতের অবস্থান ছিল ১৫৯তম।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমগুলো গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিজ্ঞাপন রাজস্ব শোষণের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বহু সংবাদমাধ্যম টিকে থাকার জন্য রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
রিপোর্টে ভারত সম্পর্কে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এখানে রাজনৈতিক নেতাদের হাতে মিডিয়া মালিকানার কেন্দ্রীকরণ ঘটেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমে মতের বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ প্রকৃত সংবাদ পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। লেবানন, আর্মেনিয়া ও বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের নাম একসাথে উচ্চারিত হয়েছে, যেখানে সংবাদমাধ্যম রাজনীতির ছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে।
সূচকে ভারতের পেছনে রয়েছে ভুটান (১৫২), পাকিস্তান (১৫৮), তুরস্ক (১৫৯), সৌদি আরব (১৬২), চীন (১৭৮), রাশিয়া (১৭১), আফগানিস্তান (১৭৫), সিরিয়া (১৭৭) এবং উত্তর কোরিয়া (১৭৯)-র মতো দেশগুলি। তবে উল্লেখযোগ্য যে প্রতিবেশী বাংলাদেশ (১৪৯) এই তালিকায় কিছুটা উপরে অবস্থান করছে। এর মানে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবেও ভারত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
সূচকে প্রথম পাঁচে রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে, এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড। যুক্তরাজ্য রয়েছে ২০ তম স্থানে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪২টি দেশে সাংবাদিকতা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও কঠিন পেশায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত গুরুতর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। গাজায় ইজরায়েলি (১১২) অভিযানে প্রায় ২০০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং সেখানে ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে সম্পূর্ণ অবরোধ চলছে। প্যালেস্টাইন ১৬৩ তম স্থানে রয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকা (২৭) এবং নিউজিল্যান্ড (১৬) এর মতো তুলনামূলকভাবে ভালো দেশগুলিও এই ধরনের চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্ত নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নিকারাগুয়া (১৭২তম), বেলারুশ (১৬৬তম), ইরান (১৭৬তম)-এর মতো ৩৪টি দেশ তাদের মিডিয়া আউটলেটগুলি ব্যাপকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে সাংবাদিকরা চরম সংকটের মুখে পড়েছেন।
রিপোর্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৫৭তম, যা আগের বছরের তুলনায় দুই ধাপ নেমে এসেছে। RSF-এর মতে, দেশটিতে স্থানীয় সাংবাদিকতা চরম আর্থিক চাপে রয়েছে, বিশেষ করে অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, নেভাডা এবং পেনসিলভানিয়ার মতো অঙ্গরাজ্যে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ২০২৫ সালের এই সূচক বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার স্বাধীনতার উপর একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিচ্ছে। রিপোর্টারদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মিডিয়াকে সংকটের মুখে ফেলেছে। ভারতের ক্ষেত্রে, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত সংবাদমাধ্যমের এই দুরবস্থা ভাবিয়ে তুলছে স্বাধীন মতপ্রকাশের ভবিষ্যৎ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন