
এনসিইআরটি-এর সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ফের পরিবর্তন। সমাজ বিজ্ঞানের বই থেকে বাদ পড়ল দিল্লির মোঘল সাম্রাজ্য এবং সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাস। তার পরিবর্তে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে নতুন সংযোজন মগধ, মৌর্য, শুঙ্গ এবং সাতবাহন সাম্রাজ্যের ইতিহাস। এছাড়া নতুন পাঠ্যবইয়ে যোগ করা হয়েছে সদ্য সমাপ্ত উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলার প্রসঙ্গও।
নতুন বইয়ের প্রথম অংশটি পাঁচটি বিস্তৃত বিষয়ের উপর আলোকপাত করে: ভারত এবং বিশ্ব, অতীতের ট্যাপেস্ট্রি, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং জ্ঞান, শাসন ও গণতন্ত্র এবং আমাদের চারপাশের অর্থনৈতিক জীবন।
নয়া শিক্ষানীতি অনুসারে নতুন পাঠ্যবই এনেছে এনসিইআরটি। গত সপ্তাহেই তা প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্রের শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনে থাকা সংস্থার দাবি, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ -সহ জাতীয় স্কুল শিক্ষা পাঠক্রম ২০২৩-এর উপর ভিত্তি করেই পাঠ্যবই আনা হয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতি, দর্শন, জ্ঞান, চর্চার ঐতিহ্য এবং আঞ্চলিকতাকে মাথায় রেখেই এগুলো যোগ করা হয়েছে।
যদিও ইতিহাসবিদদের দাবি, শিক্ষার গৈরিকরণের স্বার্থে সঙ্ঘ পরিবারের পরিকল্পনা মেনেই স্কুল কলেজের পাঠ্যবইয়ে এমন একাধিক বদল আনা হয়েছে। এবিষয়ে পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন এনসিইআরটি-র আধিকারিকরা। তাঁদের মতে, সদ্য প্রকাশিত এই বই সপ্তম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের প্রথম ভাগ। এখনও দ্বিতীয় ভাগ প্রকাশ করা হয়নি। তবে দ্বিতীয় ভাগে প্রথম ভাগ থেকে বাদ দেওয়া উপাদানগুলো রাখা হবে কিনা, সে ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট করেনি। এনসিইআরটি-র আরও যুক্তি, ছাত্রছাত্রীদের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্যই মোঘল ও সুলতানি সাম্রাজ্যের ইতিহাস বাদ দেওয়া হয়েছে।
যদিও সংস্থার এই তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়েছেন ইতিহাসবিদরা। তাঁদের দাবি, বাদ দেওয়া জায়গায় মগধের উত্থান, মৌর্য, শুঙ্গ, চেদি, চোল, পাণ্ড্য এবং সাতবাহনের মতো দেশীয় রাজবংশের ইতিহাস বেশ কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যুক্ত করা হয়েছে ১২ জ্যোর্তিলিঙ্গ, চারধাম যাত্রা ও শক্তি পীঠের ধর্মীয় গুরুত্ব। উল্লেখ্যযোগ্যভাবে, ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলার বিষয়ের বেশ খানিকটা অংশ যুক্ত করা হয়েছে। তবে কুম্ভতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হওয়ার ঘটনাটি রাখা হয়নি। এছাড়াও রয়েছে মেক ইন ইন্ডিয়া, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, অটল সুড়ঙ্গ নির্মাণ নিয়ে অধ্যায়।
নতুন বিষয়বস্তুতে প্রাচীন ভারতীয় পাণ্ডিত্যের ব্যাপক উল্লেখ রয়েছে। যেমন কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, পাণিনির ব্যাকরণ, আর্যভট্টের জ্যোতির্বিদ্যা এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যের বৈজ্ঞানিক অবদান। সঠিক উচ্চারণ নিশ্চিত করার জন্য সংস্কৃত শব্দগুলি ডায়াক্রিটিক্যাল চিহ্ন সহ ব্যবহার করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন