
স্বাস্থ্যবীমা করে নিশ্চিন্তে আছেন? অসুস্থতার সময় আগে থেকে করে রাখা বীমা দিয়েই চিকিৎসার খরচ মেটাবেন ভাবছেন? হ্যাঁ। সেরকমই অবশ্য ভাবার কথা এবং সেই কথা ভেবেই সাধারণ মানুষ আগে থেকেই স্বাস্থ্যবীমা করে থাকেন। যদিও সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, স্বাস্থ্য বীমা থাকা সত্ত্বেও বহু গ্রাহকের দাবি বাতিল করেছে বিভিন্ন বীমা সংস্থা। সম্প্রতি বীমা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (IRDAI) জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে মোট জমা পড়া দাবির মধ্যে ১২.৯ শতাংশেরই আবেদন বাতিল করেছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবীমা সংস্থা। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৫,১০০ কোটি টাকা।
আইআরডিএআই-এর বাৎসরিক রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে বিভিন্ন বীমা সংস্থার কাছে মোট জমা পড়া আবেদনের মধ্যে ২০২৪-এর মার্চ মাস পর্যন্ত ২৬৮.৫৯ লক্ষ দাবি মেটানো হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৮৩,৪৯৭.১৭ কোটি টাকা (৭১.২৯%)। মোট দাবির পরিমাণ ছিল ১,১৭,১১৫.৩৪ কোটি টাকা।
এই সময় বিভিন্ন বীমা সংস্থা ৩৬.৪০ লক্ষ আবেদন বা ১০,৯৩৭.১৮ কোটি টাকার (৯.৩৪%) দাবি বাতিল করেছে। এছাড়াও দাবি মেটানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে ৬.৪৮ শতাংশ বা ৭,৫৮৪.৫৭ কোটি টাকার।
২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের শুরুতে আগের আবেদনের ভিত্তিতে দাবি মেটানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল ১৭.৮৫ লক্ষ আবেদন। দাবির পরিমাণ ছিল ৬,৯২০.২৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪-এ আবেদন জমা পড়ে ৩০৭.৮৭ লক্ষ। মোট দাবির পরিমাণ ১,১০,৮২৫.০৬ কোটি টাকা।
যেসব আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে তার মধ্যে ৬৬.১৬% দাবি মেটানো হয়েছে ক্যাশলেস পদ্ধতিতে এবং বাকি ৩৯ শতাংশ রিইমবারসমেন্ট পদ্ধতিতে।
ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভারতের বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (IRDAI) জানিয়েছে, ভারতে স্বাস্থ্য বীমা দাবি প্রত্যাখ্যানের হার ১১%-এ পৌঁছেছে এবং ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৬% দাবি মেটানো বাকি আছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে হয়েছে যে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়া অর্থবছরে বীমা কোম্পানিগুলি ২৬,০০০ কোটি টাকার স্বাস্থ্য পলিসি দাবি প্রত্যাখ্যান এবং বাতিল করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়া অর্থবছরে দাবি বাতিলের পরিমাণ ছিল ২১,৮৬১ কোটি টাকা। যা ২০২৪-এর মার্চ মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে ১৯.১০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বীমা ক্ষেত্রে বড়ো অঙ্কের দাবি না মেটানোর এক উল্লেখযোগ্য প্রবণতাকে তুলে ধরে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, বীমা কোম্পানিগুলি কর্তৃক অনুমোদিত দাবির পরিমাণ ১৫,১০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ১২,৭৫৪ কোটি টাকার অনুপাতে বেশি। প্রতিবেদন অনুসারে বীমা কোম্পানিগুলি ২০২৪ অর্থবছরে মোট ১০,৯৩৭ কোটি টাকার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৯,১০৭ কোটি টাকা।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যবীমা ক্ষেত্রে দাবি না পাওয়ার বিষয়ে এক সমীক্ষা করে লোকাল সার্কেলস নামক এক সংস্থা। এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ২৮,৭০০ জন। শেষ ৩ বছরের নিরিখে করা যে সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। এই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, বৈধ কারণে ৬ শতাংশের দাবি মেটানো হয়নি। কোনও বৈধ কারণ ছাড়াই ২০ শতাংশের দাবি মেটানো হয়নি। বৈধ কারণে আংশিক দাবি মেটানো হয়েছে ১৬ শতাংশের। ৩৩ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনও বৈধ কারণ ছাড়াই পুরো দাবি মেটানো হয়নি। মেটানো হয়েছে আংশিক দাবি। মাত্র ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্যবীমাকারীর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দাবি মেটানো হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন