
সপ্তাহখানেক আগে বস্তার পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এক যৌথ অভিযানে অবুঝামাড জঙ্গলে ৭ জন সন্দেহভাজন মাওবাদীকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও স্থানীয় গ্রামবাসী এবং সমাজকর্মীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে নিহত ৭ জনের মধ্যে ৫ জন ছিলেন নিরীহ গ্রামবাসী। পুলিশি গুলিচালনার সময় তাঁরা মাঠে কাজ করছিলেন। তাদের আরও দাবি, পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছে চার শিশুও। গত ১১ ডিসেম্বর এই ঘটনা ঘটে।
ছত্তিশগড়ের এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বাঘেল। এই ঘটনার পরেই বাঘেল লেখেন, “নকশালদের বিরুদ্ধে বাহিনী যখন লড়াই করছিল তখন এই শিশুরা কীভাবে আহত হল? এটা কি সত্যিই একটি এনকাউন্টার, নাকি নিরীহ মানুষদের হত্যা? বিজেপি সরকারের ভুয়া এনকাউন্টারের রেকর্ড খুবই খারাপ। এমনকি তাদের গত মেয়াদেও এই ধরণের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। আমি বিশ্বাস করি কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং রাজ্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেবে। অযৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে মাওবাদীদের নির্মূল করার জন্য অতিরঞ্জিত পরিকল্পনা অনুসরণ করে নিরীহ আদিবাসীদের ক্ষতি করা উচিত নয়।”
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সোনি সোরি নামক আদিবাসী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক সমাজকর্মী জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের বক্তব্য অনুসারে, ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ডের সদস্যরা ১১ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে আসেন। ওই সময় গ্রামের মানুষ মাঠে কাজ করছিলেন। সঙ্গে তাদের পরিবারও ছিল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ এক এক করে গ্রামবাসীদের গুলি করে। অন্যদিক থেকে কোনও গুলি চলেনি বা দু’পক্ষের মধ্যে কোনও গুলি বিনিময় হয়নি।
তিনি আরও জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে আহত চার শিশুর মধ্যে ১৩ বছর বয়সী এক শিশুর ঘাড়ে গুলি লেগেছে। ৯ বছরের এক শিশুর মাথায় গুলি লেগেছে। ১২ বছরের এক শিশুর পাছায় গুলি লেগেছে (এই শিশুর বাবা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে) এবং ১৩ বছরের এক শিশুর হাতে এবং পায়ে গুলি লেগেছে। সমাজকর্মীর অভিযোগ, এঁদের কাউকেই ওই দিনের ঘটনার পর তিন দিন পর্যন্ত কোনও চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হয়নি। বর্তমানে তাদের রায়পুর, দান্তেওয়ারা এবং জগদলপুরে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে সমাজকর্মীর এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের দাবি, ওইদিনের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাঁরা কেউ নিরীহ গ্রামবাসী নন। পুলিশের আরও দাবি, ওই শিশুদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল মাওবাদীরা।
গত ১১ ডিসেম্বর, ডিআরজি, স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এবং সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) সহ নিরাপত্তা বাহিনী ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলার অন্তর্গত দক্ষিণ আবুঝামাড জঙ্গলে এক সংঘর্ষে দুই মহিলা ক্যাডার সহ সাত মাওবাদীকে হত্যা করার দাবি করে। বাহিনী বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের কথাও জানায়। যদিও পুলিশ তাদের বিবৃতিতে শিশুদের আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করেনি। নারায়ণপুর জেলার রেখাওয়ায়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কুম্মাম এবং লেকাওয়াদা গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন