উৎপাদন কমে যাওয়া, ছোট ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে গত কয়েক মাসে গুজরাটে প্রায় ১০ হাজার হীরা শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। একথা জানিয়েছেন সুরাট ডায়মন্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি রমেশ জিলারিয়া। এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে শ্রমিকদের আত্মহত্যা। বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ৩১ বছর বয়সী হীরা শ্রমিক বিপুল জিনজালা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান বর্তমান।
আত্মঘাতী বিপুল জিনজালার ছোট ভাই পরেশ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে তার বড় ভাই আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কারণ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির সাথে বেতন কমছিল এবং তার ভাইয়ের পক্ষে যা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। যা তাঁকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিপুল একাই নন, গুজরাটের হাজার হাজার কর্মী তাদের পারিবারিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাউজিং বা যানবাহন ঋণের ইএমআই, বাচ্চাদের স্কুলের ফি এবং দৈনন্দিন গৃহস্থালির খরচ মেটাতেও শ্রমিকদের সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুরাট ডায়মন্ড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রমেশ জিলারিয়া।
ইউনিয়ন দাবি করছে, রাজ্যের হীরা সেক্টরে শ্রম আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত, যা ফ্যাক্টরি আইনের আওতায় থাকা উচিত। যেখানে শ্রমিকরা ESCI, ভবিষ্যনিধি তহবিল, নির্দিষ্ট কাজের সময় এবং অন্যান্য সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুবিধা পায়। যা অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিকরা পেয়ে থাকেন।
জিলারিয়ার অভিযোগ, বর্তমানে হীরা শ্রমিকদের কোনও সামাজিক নিরাপত্তা নেই। কারণ তারা রেজিস্ট্রিকৃত কর্মচারী নন, তাঁরা বেতন স্লিপ পান না বা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না। ফলে তারা অন্যান্য সুবিধাও পান না।
এই প্রসঙ্গে জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি প্রমোশন কাউন্সিলের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান বিজয় মাঙ্গুকিয়া জানিয়েছেন, ক্রিসমাসের সময় আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি কমার কারণে উৎপাদন কমেছে ২০ থেকে ২১ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দেশের সমাপ্ত হীরা রপ্তানি কমেছে অনেকটাই। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে যা ছিল ২,৯০৫ মিলিয়ন ডলার, ২০২২-এর ডিসেম্বরে ১৮.৯০ শতাংশ কমে তা দাঁড়িয়েছে ২,৩৫৬.৭০ মিলিয়ন ডলারে।
এই কারণে উৎপাদন ইউনিটগুলিকে উৎপাদন কমাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাঙ্গুকিয়া। যদিও তাঁর মতে, এর ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন এমনটা নয়। কর্মীদের ছাঁটাই করে উৎপাদনে হ্রাস টানা হচ্ছে না। এখন ইউনিটগুলি কাজের সময় ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ১০ বা ৮ ঘন্টা করেছে এবং একটি সাপ্তাহিক ছুটির পরিবর্তে এখন ইউনিটগুলি ২টি সাপ্তাহিক ছুটি দিচ্ছে।
যদিও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জিলারিয়া এই ব্যাখ্যা মানতে রাজী নন। তাঁর অভিযোগ, কাজের সময় কমানো এবং সাপ্তাহিক ছুটি বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা কম হীরা কাটছে এবং পালিশ করছে। যেহেতু তাঁরা হীরা কাটা এবং পালিশের সংখ্যার ওপর বেতন পান, তাই এর ফলে তাদের বেতন কমছে। যা শ্রমিকদের জন্য বিপর্যয়কর প্রমাণিত হচ্ছে।
সুরাট ডায়মন্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নানুভাই ভেকারিয়া কারখানা বন্ধের দাবি উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, গত দু-তিন মাসে একটিও হীরার ইউনিট বন্ধ হয়নি। উল্টো তিনি দাবি করেন, মন্দা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় হৈ চৈ করা হচ্ছে, যেখানে শিল্প একশোভাগ সক্ষমতায় কাজ করছে। ভেকারিয়ার মতে, সুরাটে ৩০০০ ইউনিটে এখন ৭ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন