
* ১৯৯৯ সালের ২২ জানুয়ারি রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় গাড়িতে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয় গ্রাহাম স্টেইনস ও তাঁর দুই শিশুপুত্রকে।
* প্রাথমিকভাবে এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে দারা সিং ও মহেন্দ্র হেমব্রম সহ ৫১ জন গ্রেপ্তার হন।
* ২৫ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পেলেন মহেন্দ্র হেমব্রম। তাঁর মুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
ওড়িশার কেওনঝাড়ে গ্রাহাম স্টেইনস ও তাঁর দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত মহেন্দ্র হেমব্রমকে মুক্তি দিল আদালত। বুধবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ওড়িশার কেওনঝাড় জেল থেকে। সংশোধনাগারে ‘ভালো আচরণ’-এর জন্য তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দ্য হিন্দু-র প্রতিবেদন অনুসারে, মুক্তির পর তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে সংবর্ধনা জানান তাঁর অনুগামীরা। এই মামলার মূল অভিযুক্ত দারা সিং এখনও জেলে আছেন। প্রাথমিক ভাবে তাঁর মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হলেও পরবর্তী সময়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা দেওয়া হয়।
সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত মহেন্দ্র হেমব্রমের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের ২২ জানুয়ারি রাতে দুই শিশু সন্তান সহ ঘুমন্ত ধর্মপ্রচারক গ্রাহাম স্টেইনসের গাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ ছিল। মহেন্দ্র হেমব্রমের মুক্তির সুপারিশ করেছে ওড়িশা স্টেট সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ড এবং কেওনঝাড় জেল কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছেন আইন মেনেই মহেন্দ্রকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে এই মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত দারা সিং-এর মুক্তির বিষয়ে সরব হয়েছিলেন কেওনঝাড়ের বিধায়ক মোহন মাঝি, বর্তমানে যিনি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, মহেন্দ্র হেমব্রমের মুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক কেদার দাসকে উদ্ধৃত করে ওই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, “এটা আমাদের জন্য একটা খুব ভালো দিন। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।”
সূত্র অনুসারে, ১৯৯৯ সালে গ্রাহাম স্টেইনস ও তাঁর দুই শিশুপুত্র হত্যার ঘটনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন ২৫ বছর বয়সী মহেন্দ্র হেমব্রম। সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া এই হত্যার ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে মোট ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও প্রাথমিক তদন্ত পর্বে এঁদের মধ্যে ৩৭ জন মুক্তি পেয়ে যায়। সিবিআই কোর্টে অভিযুক্ত হয় দারা সিং এবং মহেন্দ্র হেমব্রম সহ বাকি ১৪ জন। যদিও এঁদের মধ্যে ১১ জনকে পরবর্তী সময় মুক্তি দেয় ওড়িশা হাইকোর্ট। বাকি ৩ অভিযুক্তের মধ্যে ঘটনার সময় যুক্ত থাকা এক নাবালক, চেঞ্চু হাঁসদাকে ২০০৮ সালে বিশেষ আপিলের পর মুক্তি দেয় আদালত।
কী হয়েছিল সেদিন?
গ্রাহাম স্টেইনস ছিলেন একজন খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক। ১৯৬০-এর দশকে ময়ূরভঞ্জের ইভাঞ্জেলিক্যাল মিশনারি সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি ভারতে আসেন। ১৯৮৩ সালে সহকর্মী অস্ট্রেলিয়ান ধর্মপ্রচারক গ্ল্যাডিসকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁদের তিন সন্তান ছিল। মূলত কুষ্ঠ রোগীদের সেবা করতেন তাঁরা। কিন্তু বজরং দলের অভিযোগ ছিল, তাঁরা স্থানীয় হিন্দুদের খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করতেন।
১৯৯৯ সালের ২২ জানুয়ারি দুই ছেলে ফিলিপ (১০) এবং টিমোথি (৬)–কে নিয়ে কেওনঝারের মনোহরপুরে এক জঙ্গল শিবিরে খ্রিস্টানদের একটি মণ্ডলীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল স্টেইনস। গ্ল্যাডিস এবং তাদের মেয়ে এথার তখন উটিতে ছিল। ওই দিন রাতে বজরং দলের নেতা দারা সিং ওরফে রবীন্দ্র পাল সিং-এর নেতৃত্বে গ্রাহাম স্টেইনস এবং তাঁর দুই ছেলের উপর হামলা চালানো হয়।
জানা যায়, গ্রাহাম স্টেইনস এবং তাঁর দুই শিশুপুত্র সেই সময় একটি স্টেশন ওয়াগনে ঘুমোচ্ছিলেন। ওই অবস্থায় গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলে, লাঠি হাতে তাদের গাড়ি থেকে বেরোতে বাধা দিয়েছিল হামলাকারীরা। যার ফলে গাড়ির ভিতরেই জীবন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়।
মহেন্দ্র হেমব্রমের মুক্তি
চলতি বছর নিজেকে ‘অনুতপ্ত’ বলে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে মুক্তি আবেদন করেছিলেন দারা সিং। ১৯ মার্চ ছিল সেই মামলার শুনানি। শুনানিতে ওড়িশা হাইকোর্টকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
বুধবার মুক্তির পর ৫১ বছর বয়সী মহেন্দ্র হেমব্রম জানিয়েছে, “আমি জেলে ২৫ বছর কাটিয়েছি। ধর্মান্তর সম্পর্কিত একটি মিথ্যে ঘটনায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম। আজ মুক্তি পেলাম”। কেওনঝাড় জেলের জেলার মনস্বিনী নায়েক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, “হেমব্রমকে মুক্তি দিয়েছে রাজ্যে শাস্তি পর্যালোচনা বোর্ড। মঙ্গলবারই চিঠিতে আমাদের সে বিষয়ে জানানো হয়। ভালো ব্যবহারের কারণেই ২৫ বছর কারাবাসের পর হেমব্রমকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন