
ভেঙে গেল ১৬৪ বছরের রেকর্ড। ভারতের আর্দ্রতম স্থানের তকমা হারাল মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি (Cherrapunji) এবং সংলগ্ন মৌসিনরাম (Māwsynrām)। চলতি বছর বর্ষার মরসুমে সেই তকমা হারিয়েছে উত্তর–পূর্ব ভারতের এই পাহাড়ি জনপদ। এই দুই জায়গাকে পেছনে ফেলে দেশের আর্দ্রতম স্থান হিসেবে উঠে এসেছে মহারাষ্ট্রর পুনে থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরের তামহিনি (Tamhini) ও কর্ণাটকের কুর্গ জেলার সুরলাব্বি (Surlabi)।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (World Meteorological Organization) তথ্য অনুযায়ী, ১৮৬০ সালের ১ আগস্ট থেকে ১৮৬১ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে মোট ২৬,৪৭০ মিমি (১,০৪২ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছিল। যাকে মান্যতা দিয়েছিল গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস (Guinness World Records)।
চলতি বছর চেরাপুঞ্জি (সোহরা) ও মৌসিনরাম (পূর্ব খাসি হিলস, মেঘালয়) বড় ধরনের বৃষ্টির ঘাটতির মুখে পড়েছে। এ বছর বর্ষায় চেরাপুঞ্জিতে এখনও পর্যন্ত মাত্র প্রায় ৩,৫০০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে—যা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কম। মৌসিনরামেও একই ছবি ধরা পড়েছে।
অন্যদিকে, কর্ণাটকের সুরলাব্বিতে এই সময়ে প্রায় ৭,৩০০ মিমি এবং মহারাষ্ট্রের তামহিনিতে প্রায় ৫,৭৮৮ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, জুন–জুলাই মাসেই দেশের অন্তত ৩২টি জায়গায় চেরাপুঞ্জির চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
১৯৬১ সালে প্রথমবার আবহাওয়া বিজ্ঞানের রেকর্ডের বইতে উঠে আসে চেরাপুঞ্জির নাম। সে বছর ২৬ হাজার ৪৬৭ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল, যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়নি। এরপর ১৯৯৫ সালে ১৬ জুন চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৬৩ মিমি (৬১ ইঞ্চি) বৃষ্টি হয়েছিল, যা আজও বিশ্ব রেকর্ড। এরপর সংলগ্ন মৌসিনরামকেও বেশি বৃষ্টিপাত স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামে বরাবরই প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণ তাদের ভৌগোলিক অবস্থান। খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত এই অঞ্চল সরাসরি বঙ্গোপসাগরীয় মৌসুমি বাতাসের মুখোমুখি হয়। পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে আর্দ্র বাতাস দ্রুত উপরে উঠে যায় এবং অরোগ্রাফিক প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। চলতি বছরে তাতে ভাটা পড়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
তবে চলতি বছর চেরাপুঞ্জির অবস্থা খারাপ। এবছর আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতি ৫০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে যদি ১৯০০ মিমি বৃষ্টি না হয়, তবে এ বছরের বর্ষা চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামের ইতিহাসে সবচেয়ে শুষ্ক মরশুম হিসেবে নথিভুক্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, দেশের পশ্চিম প্রান্তে একেবারেই অন্যরকম ছবি ধরা পড়েছে। আগস্ট পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের তামহিনিতে ৭৮০০ মিমি–র বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে জুন–জুলাইতেই হয়েছে ৫৭৮৮ মিমি। কর্ণাটকের সুরলাব্বি ওই সময়ের মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৫৯৫১ মিমি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন