আদানিকে নিয়ে করা মোট ১৩৮টি ইউটিউব ভিডিও এবং ৮৩টি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক (I&B)। দু'টি সংবাদমাধ্যম ও একাধিক ডিজিটাল ক্রিয়েটরকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজেসের দায়ের করা এক মানহানির মামলার ভিত্তিতে দিল্লির এক আদালতের রায় মেনে এই নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই নির্দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া (Editors Guild of India) এক এক্স বার্তায় জানিয়েছে, "গণতন্ত্রের জন্য একটি স্বাধীন ও নির্ভীক সংবাদমাধ্যম অপরিহার্য। যে কোনও ব্যবস্থা যদি ব্যক্তিগত স্বার্থকে একতরফাভাবে সমালোচনামূলক বা অস্বস্তিকর কণ্ঠস্বর বন্ধ করে দেওয়ার অনুমতি দেয়, তা জনগণের জানার অধিকারের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে।"
মন্ত্রকের ১৬ সেপ্টেম্বরের চিঠি অনুযায়ী, এই নির্দেশ দ্য ওয়্যার, নিউজলন্ড্রি - এই দুই নিউজ পোর্টালকে এবং সাংবাদিক রবিশ কুমার, অজিত অঞ্জুম, ধ্রুব রাঠি, আকাশ ব্যানার্জি (দেশভক্ত নামে বেশি পরিচিত) ও আরও কয়েকজন কনটেন্ট ক্রিয়েটারদের উপর প্রযোজ্য হয়েছে।
আদালতের ৬ সেপ্টেম্বরের আদেশে সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা, রবি নায়ার, অভির দাসগুপ্ত, আয়াসকান্ত দাস ও আয়ুষ জোশিকে আদানি গ্রুপ সংক্রান্ত কিছু লেখা ও পোস্ট সরাতে বলা হয়েছে।
ফ্ল্যাগ করা কনটেন্টগুলির মধ্যে কিছু নতুন প্রতিবেদন বা মতামতও ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, নিউজলন্ড্রি-এর একটি ভিডিও আসলে ছিল সাবস্ক্রিপশন সংক্রান্ত আবেদন, যেখানে কেবল আদানি সংক্রান্ত একটি নিবন্ধের স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়েছিল। দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, তাদের একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট সরানোর নির্দেশ এসেছে, যেখানে মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অভিযোগ উল্লেখ ছিল - যা জনসমক্ষে নথিভুক্ত তথ্য।
মন্ত্রকের নোটিশে বলা হয়েছে - “আদালতের আদেশ মান্য করতে আপনাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং এই চিঠি ইস্যুর ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রককে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট জমা দিতে হবে।” এই নোটিশের কপি মেটা ও গুগলকেও পাঠানো হয়েছে।
আদালতের
তবে আদালতের নির্দেশ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। অভিযোগ, অভিযুক্তদের মতামত না শুনেই রায় দিয়েছে আদালত। যদিও বিচারক অনুজ কুমার সিং স্পষ্ট করেছিলেন, ‘ন্যায়সংগত, যাচাইকৃত ও প্রমাণসাপেক্ষ রিপোর্টিং’ পুরোপুরি বন্ধ করার মতো blanket order তিনি দিচ্ছেন না।
আদানি সংক্রান্ত একাধিক রিপোর্ট প্রথম প্রকাশ্যে আনা প্রবীণ সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা জানান, “ভারতের বিচারব্যবস্থার উপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড আমার বিরুদ্ধে যে মানহানির মামলা করেছে, আমি আদালতে তার জোরালোভাবে লড়াই করব।”
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এইভাবে মানহানির মামলা করা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে দমন করার প্রচেষ্টা ছাড়া কিছুই না। সম্পূর্ণ শুনানি ছাড়াই কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন