* ৬ বছরের জন্য বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক বাসনাগৌড়া পাটিল ইয়ানতাল।
* এই নিয়ে তিনি তৃতীয়বারের জন্য বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হলেন।
* দলবিরোধী কার্যকলাপ এবং দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনা করায় কট্টরপন্থী এই নেতাকে বহিষ্কার করেছে কর্ণাটক বিজেপি।
বিজেপি কর্ণাটক থেকে বহিষ্কৃত হলেন বিতর্কিত নেতা ও দলীয় বিধায়ক বাসনাগৌড়া পাটিল ইয়ানতাল। বারংবার দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে দলের রাজ্য সভাপতি বিজয়েন্দ্রর সঙ্গে ইয়ানতালের ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে দলের যে ক্ষতি হচ্ছিল তা বন্ধ হবে। যদিও বিজেপির এক অংশ এর ফলে দল কর্ণাটকে আরও দুর্বল হবে বলেই মনে করছে। যদিও এবারই প্রথম নয়। এই নিয়ে তৃতীয়বার বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হলেন বাসনাগৌড়া ইয়ানতাল।
ইয়ানতালের বহিষ্কারের পর বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিজয়েন্দ্র সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোষ্টে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত অনিবার্য ছিল। এই ধরণের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সব দিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি কোনোভাবেই এই সিদ্ধান্তে আনন্দিত নই।
ইয়ানতালের বহিষ্কার নিয়ে দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ যেমন প্রকাশ্যেই কট্টর হিন্দুত্ববাদী এই নেতার বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আবার কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ওই পোষ্টে তিনি আরও লেখেন, “দল শৃঙ্খলা ও ত্যাগকে প্রাধান্য দেয় এবং আমাদের পূর্বসূরীদের এই মূল্যবোধের সাথে আপোষ করার কোনও উদাহরণ নেই। দলের তিক্ত ঘটনা সম্পর্কে আমি কখনও দলীয় নেতৃত্বের কাছে কোনও অভিযোগ করিনি এবং আমার বাবার অনুকরণ করার চেষ্টা করেছি। যিনি দলকে সমতার সাথে গড়ে তুলেছিলেন এবং দলকে একটি বৃহৎ পরিবারের মতো বিবেচনা করতেন। আসুন আমরা একটি দল হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হই, গঠনমূলক পরামর্শ গ্রহণ করি এবং নরেন্দ্র মোদীর “বিকশিত ভারত”-এর প্রতি সংকল্পকে শক্তিশালী করার জন্য দলকে এগিয়ে নিয়ে যাই।”
কর্ণাটক রাজনীতিতে লিঙ্গায়েত গোষ্ঠীর প্রভাব অনস্বীকার্য। এখনও পর্যন্ত রাজ্য বিজেপিতে লিঙ্গায়েত গোষ্ঠীরই প্রাধান্য। সেই প্রাধান্য যেমন নেতৃত্বেও আছে তেমনই রাজ্যে বিজেপি ভোটারদের একটা বড়ো অংশই লিঙ্গায়েত। বাসনাগৌড়া পাটিল ইয়ানতাল নিজেও পঞ্চামাশালি লিঙ্গায়েত নেতা। উত্তর কর্ণাটকে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা অনেক। ইতিমধ্যেই পঞ্চমসালি মঠের ধর্মীয় গুরুরা ইয়ানতালের বহিষ্কার প্রত্যাহার না করলে ব্যাপক বিক্ষোভে নামবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিজয়েন্দ্র এবং ইয়াতনাল দুজনেই লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের নেতা হলেও, ইয়াতনাল যে পঞ্চমসালি গোষ্ঠীর অন্তর্গত, তারা লিঙ্গায়েতদের মধ্যে সংখ্যাগতভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী উপসম্প্রদায়।
এছাড়াও কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বড়ো অংশই ইয়ানতালের সমর্থক। বিজেপি কর্ণাটকের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বও ইয়ানতালকে পছন্দ করেন। তাঁদের অনেকেই মনে করেন ৪৯ বছর বয়সী বিজয়েন্দ্র দল পরিচালনার জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞ নন এবং রাজনীতিতে ইয়ানতালের তুলনায় নতুন। ফলে তাঁর পক্ষে দলের সভাপতি হিসেবে কাজ চালানো অধিকাংশ সময়েই সম্ভব হয়ে উঠছে না। তিনি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না।
এর আগে রাজ্যের প্রভাবশালী লিঙ্গায়েত নেতা বি এস ইয়েদুরিয়াপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে কিছুটা জোর করেই সরিয়ে দেওয়ায় রাজ্য রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। সেই সময় কর্ণাটক বিজেপির হাতে একাধিক বিকল্প নেতা থাকলেও তাঁদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হয়নি। বরং ইয়েদুরিয়াপ্পার ক্ষোভ কমাতে তাঁর ছেলে বিজয়েন্দ্রকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ইয়াতনালের আগে, প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং কুরুবা নেতা কে এস ঈশ্বরাপ্পাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি কর্ণাটক দলের প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী নেতা অনন্তকুমার হেগড়ে (উত্তর কন্নড়) এবং প্রতাপ সিংহ (মহীশূর-কোডাগু) এর মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতাদেরও মনোনয়ন দেয়নি।
বহিষ্কারের পর ইয়ানতাল জানিয়েছেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে সফল ভূমিকা পালন করেছে। এটি দুর্নীতি, পারিবারিক রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং উত্তর কর্ণাটক ও হিন্দুত্বের উন্নয়নের জন্য লড়াই করা থেকে আমাকে বিরত রাখবে না।
ইয়াতনালের অভিযোগ ছিল, ইয়েদুরিয়াপ্পা এবং তার ছেলে দলের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাজনীতি করছে। ইয়ানতাল ছাড়াও দুই শিবিরের আরও পাঁচজন দলীয় নেতাকে শো-কজ করেছে রাজ্য বিজেপি। মনে করা হচ্ছে আসন্ন জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং পুর নির্বাচন এবং ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলকে সংহত করতেই বিজেপি এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
এর আগে ২০০৯ সালে দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরিইয়াপ্পা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়। সেবার তিনি ইয়েদুরিইয়াপ্পা এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শোভা কারান্দলাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরে তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এরপর ২০১৬ সালে দলীয় প্রার্থী জিএস নিয়ামাগৌড়ার বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে এমএলসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাঁকে আবার বহিষ্কার করা হয়। যদিও সেবার দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েও তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। এরপর তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাকে মনোনয়ন দেয় বিজেপি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন