
বিরোধী শিবিরের প্রবল আক্রমণের মাঝেই বিহারে এনডিএ শিবির চিন্তিত জোট শরিক এলজেপি (রামবিলাস)-কে নিয়ে। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই দলের প্রধান চিরাগ পাসোয়ানের একাধিক মন্তব্য এবং কর্মসূচিতে যথেষ্টই অস্বস্তিতে এনডিএ শিবির তথা বিজেপি ও জেডিইউ। বিশেষ করে ভোট যত এগিয়ে আসছে আক্রমণের ঝাঁঝ ততই বাড়াচ্ছেন চিরাগ। আসন রফায় বসার আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও এলজেপি নেতা চিরাগ পাসোয়ানকে নিয়ে যে যথেষ্ট চিন্তিত বিজেপি ও জেডিইউ তাতে সন্দেহ নেই।
বিহারে মহাজোটের ডাকা ভোটার অধিকার যাত্রা এবং কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর তোলা 'ভোট চোর গদি ছোড়' শ্লোগান মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। রাহুল গান্ধী যেভাবে জোরের সঙ্গে 'ভোট চুরি' হয়েছে বলে দাবি তুলেছেন তাতে সারা দেশের পাশাপাশি বিহারের বড়ো অংশের মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন। একটানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে বিহারে এই মুহূর্তে নীতিশ কুমারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়াও প্রবল। এর ওপর আছে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের জনসূরজ পার্টি। যে দল আসন্ন নির্বাচনে কোন দলের ভোট কতটা কাটবে তা নিয়ে সকলেই সন্দিহান। ফলে বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে বেশ জটিল তাতে সন্দেহ নেই।
বিহারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপির পক্ষ থেকেও চিরাগ পাসোয়ানকে দূরে ঠেলে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ বিগত লোকসভা নির্বাচনে নিজের কোটার ৫টি আসনেই জয়লাভ করেছে চিরাগ পাসোয়ানের দল। ভোট পেয়েছে ৬.৪৭ শতাংশ। সেই ফলাফল অনুসারে সাদামাটা হিসেবে কমপক্ষে ৩৫ আসন চিরাগের প্রাপ্য। যদিও ২৩৪ আসনের মধ্যে একা চিরাগ পাসোয়ান ৩৫ আসন নিয়ে নিলে অন্য শরিকদের আসন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে এনডিএ শিবিরকে।
গতবার বিহারে এনডিএ শিবিরে আসন নিয়ে এই সমস্যা ছিল না। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে জেডিইউ এবং বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল যথাক্রমে ১১৫ ও ১১০ আসনে। এছাড়া বিকাশশীল ইনসান পার্টি এবং হিন্দুস্তান আওয়ামী মোর্চা ৭ ও ১১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সেবার এনডিএ-এর বাইরে থেকে ১৩৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল চিরাগ পাসোয়ানের দল। মাত্র ১ আসনে জয়ী হলেও তাঁর দলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫.৬৬ শতাংশ।
সূত্র অনুসারে, চিরাগ পাসোয়ান বিজেপির কাছে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ৪০টি আসন চেয়েছেন। যদিও ২৩৪ আসনের মধ্যে ৪০টি আসন কোনোভাবেই বিজেপির পক্ষে চিরাগ পাসোয়ানকে ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ এনডিএ শিবিরে বিজেপি ছাড়াও আসন পাবে বড়ো শরিক জেডিইউ, হ্যাম। নিজের প্রভাব আরও বাড়াতে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় নিজের জায়গা জোরদার করতে আসনের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাবেন চিরাগ।
অন্যদিকে যে প্রধানত যে দুটি দলের ওপর ভরসা করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে তার একটি নীতিশ কুমারের জেডিইউ। যেহেতু নীতিশ কুমারের সমর্থনের ওপর কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্ভর করছে তাই বিজেপির পক্ষেও এই মুহূর্তে নীতিশ কুমারকে খুব বেশি চটানো সম্ভব নয়। ফলে কার ভাগ থেকে কে কটা আসন চিরাগকে ছাড়বে তা নিয়েও দড়ি টানাটানি হবে বিজেপি ও জেডিইউ-র মধ্যে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এবং জেডিইউ - দু'দলই আসন পেয়েছে ১২টি করে। ফলে এক্ষেত্রেও জেডিইউ সহজে আসন ছাড়তে চাইবে না।
যদিও শুধু এটুকুই নয়। চিরাগ পাসোয়ান বিজেপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ অন্য কারণেও। যা হল ভোট শতাংশ। বিহারের দলিত জনগোষ্ঠীর ৬ শতাংশর বেশির সমর্থন আছে চিরাগের দিকে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও চিরাগ পাসোয়ানের দল পেয়েছিল প্রায় ২৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৫৭ ভোট। অনেক আসনেই সেবার নীতিশ কুমারের দলের জয়ের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল চিরাগ পাসোয়ানের দল। ফলে মাত্র ১১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও মাত্র ৪৩ আসনেই নীতিশ কুমারকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। লোকসভা ভোটে পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চিরাগ পাসোয়ানের দলের প্রাপ্ত ভোট ২৮ লক্ষ ৩ হাজার ৯৩৬।
এবারের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই চিরাগ পাসোয়ান যেভাবে কোমর বেঁধে নেমেছেন তাতেও প্রমাদ গুণেছে বিজেপি। কারণ যেহেতু চিরাগ পাসোয়ানের একলা চলার অভ্যেস আছে এবং তিনি আগে থেকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বেশি আসনের, সে ক্ষেত্রে তাঁর দাবীমত আসন না পেলে তিনি একলা চলো নীতি আঁকড়ে ধরতে পারেন। সেক্ষেত্রে এবার বিহারে এনডিএ শিবিরের পরাজয় আটকানো মুশকিল হবে।
আসন্ন বিহার বিধানসভা ভোটের বহু আগে থেকেই চিরাগ পাসোয়ানের দল ‘চিরাগ – দ্য ফিউচার সিএম’ হোর্ডিং-এ ভরিয়ে দিয়েছে বিহার। নিজের ঘনিষ্ঠ মহলেও চিরাগ পাসোয়ান একাধিকবার জানিয়েছেন, তিনি জাতীয় রাজনীতির বদলে রাজ্য রাজনীতিতে ফিরতে আগ্রহী। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে তিনি আসলে আসন রফার সময়ে দর কষাকষিতে এগিয়ে থাকার জন্যেই এসব করছেন। কারণ এনডিএ-র দুই প্রধান শরিক জেডিইউ এবং বিজেপির মধ্যে আসন ভাগাভাগির পর খুব বেশি আসন পড়ে থাকবে না। ফলে এখন থেকেই তিনি এনডিএ শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন। যাতে চূড়ান্ত আসন ভাগাভাগির সময় তাঁর দলের ভাগে বেশি আসন জোটে। চিরাগ পাসোয়ানের দল হোর্ডিং লাগালেও চিরাগ জানিয়েছেন, তাঁর দল মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার নয় এবং বিধানসভা নির্বাচনে এলজেপি নীতিশ কুমারের নেতৃত্বেই লড়াই করবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন