

বিহারের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে?
বিহারে বিজেপি তথা এনডিএ-র একপেশে জয়ের পর এবার জোর চর্চা পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে? পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কি নীতিশকুমার-ই? নাকি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিহার এবার অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চলেছে। বিহারে এনডিএ শিবিরের একতরফা জয়ের পর এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। নীতিশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কিনা সেই জল্পনা আরও বেড়েছে আজই জেডিইউ এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোষ্ট করেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা তুলে নেওয়ায়। যাকে এনডিএ শিবিরের মধ্যে টানাপোড়েন হিসেবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতিশের নাম নির্বাচন পর্বে প্রস্তাব করেনি বিজেপি
এবারের নির্বাচনে প্রথম থেকেই একবারের জন্যও পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতিশ কুমারের নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি। যদিও বলা হয়েছিল নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে নির্বাচনে লড়াই করবে এনডিএ। যদিও নির্বাচনে লড়াই করা আর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া এক জিনিস নয়। তা বোধহয় সবথেকে ভালো জানেন নীতিশ কুমার স্বয়ং। তাই তড়িঘড়ি এক্স হ্যান্ডেল থেকে আপাত নির্বিষ এক পোষ্ট মুছে দেওয়া হয়েছে জেডিইউ-র পক্ষ থেকে।
এক্স হ্যান্ডেল থেকে জেডিইউ-এর পোষ্ট ডিলিট-এর কারণ কী?
এর আগে পাটনা জুড়ে ফ্লেক্সে বলা হয়েছিল, ২৫ শে ৩০, ফির সে নীতিশ’। আর এদিনের এক্স বার্তায় বলা হয়েছিল (পূর্বতন ট্যুইটার) "অভূতপূর্ব এবং অতুলনীয়। নীতিশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন"। যদিও পোষ্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই পোষ্ট ডিলিট করে দেয় জেডিইউ। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র জল্পনা শুরু হয়ে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে মহারাষ্ট্রের উদাহরণ বিহারেও
এর আগে মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একনাথ শিন্ধেকে ব্যবহার করে মহা বিকাশ আঘাদি সরকার ভাঙার পর প্রাথমিকভাবে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলেও ২০২৪-এ বিধানসভা নির্বাচনের পর তাঁকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। বিহারের ক্ষেত্রেও গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির থেকে নীতিশ কুমারের জেডিইউ অনেক কম আসন পেলেও তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিয়েছিল বিজেপি। যদিও এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গতবারের মত এবারের অঙ্ক অতটা সহজ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
কোন দল কত আসনে জয়ী?
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুসারে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের এখনও পর্যন্ত ফলাফলের যা গতিপ্রকৃতি তাতে ১০১টি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপি জয়ী হতে চলেছে ৯০ আসনে এবং জেডিইউ ৮৪ আসনে। এনডিএ শিবিরের এলজেপি (রামবিলাস) ১৯ আসনে, হ্যাম ৫ আসনে এবং আরএলএম ৪ আসনে। এক্ষেত্রে নীতিশ কুমারকে বাদ দিলেও এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ১২২ আসন জোগাড় খুব একটা অসুবিধা হবে না।
নীতিশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর ওপর নির্ভরশীল কেন্দ্রের এনডিএ সরকার
যদিও কেন্দ্রের সরকার যেহেতু নীতিশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডু নির্ভর তাই এখনই নীতিশ কুমারের সঙ্গে কোনও বড়ো সংঘাতে যাওয়া বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ কেন্দ্রের সরকার টিকিয়ে রাখতে জেডিইউ-র ১২ এবং তেলেগু দেশমের ১৬ সাংসদ বিজেপির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার সম্রাট চৌধুরীও
অন্যদিকে ৯০ অথবা ৯১ আসনে জয়ী হওয়া বিজেপির ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবীদার বর্তমান মন্ত্রীসভার উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী। বিহার বিধানসভায় বিজেপি এবার একক বৃহত্তম দল হবার পরেও নীতিশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েই থাকতে হবে। বিহারের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাবশালী সম্রাট চৌধুরীও তা কতটা মেনে নেবেন প্রশ্ন আছে তা নিয়েও।
বিজেপি নয়, দর কষাকষির ক্ষমতা নীতিশেরই হাতে কেন?
নীতিশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিলে জাতীয় রাজনীতিতে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে নীতিশ কুমারকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ দেওয়া না হলে দিল্লিতে তাঁকে অন্য কোনও সম্মানজনক পদ দিয়ে তুষ্ট রাখতে হবে। কারণ কুড়ি বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকবার পরেও নীতিশ কুমারের জনপ্রিয়তা যে এখনও প্রশ্নাতীত এবং এখনও তিনি নির্বাচনী ময়দানে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারেন এবারের নির্বাচনই তার বড়ো প্রমাণ। ঠিক এই কারণেই, বিজেপি একক বৃহত্তম দল হলেও এই মুহূর্তে বিহারে বিজেপির চেয়ে দর কষাকষির ক্ষমতা কিন্তু নীতিশ কুমারেরই অনেক বেশি। রাজনীতির খেলার বল তাঁরই কোর্টে।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন