সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবথেকে বেশি ভোট পড়লো বিহারে প্রথম দফার নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে গতকাল ৬ অক্টোবর বিহারের ১৮ জেলার ১২১ আসনে ভোট পড়েছে ৬৪.৬৬ শতাংশ। যদিও নির্বাচন কমিশনের ভোটার টার্নআউট অ্যাপ জানাচ্ছে এই হার ৬৪.৬৯ শতাংশ। ২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের অনুপাতে এই হার প্রায় ৭ শতাংশ বেশি এবং যার ফলে নির্বাচনের অনেক অঙ্ক হেরফের হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর আগে বিহারে সবথেকে বেশি ভোট পড়েছিল ২০০০ সালে, ৬২.৫৭ শতাংশ।
বিহারে বেশি ভোটদানের হার কিসের ইঙ্গিত?
সাধারণভাবে ভোটদানের হার বেশি হলে তা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা হিসেবে এবং পরিবর্তনের পক্ষে বলেই ধরা হয়। যদিও ব্যতিক্রম একদম নেই তা নয়। কখনও কখনও বেশি ভোটদানের শাসকের পক্ষে যাবার নজিরও আছে। বিহারের ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, মহিলারা বেশি সংখ্যায় ভোট দিলে তা এনডিএ-র পক্ষে যাবার সম্ভাবনা বেশি। পাশাপাশি তাঁরা আরও জানিয়েছেন, বিহারের নির্বাচনে ৫৬ শতাংশ ক্ষেত্রে জনমত সমীক্ষার ফলাফল মেলেনি।
বিহার নির্বাচনের অতীতের পরিসংখ্যান অনুসারে, যখন যখন বেশি হারে ভোট পড়েছে তখন তখনই সরকার বদল হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে ১৯৬২ এবং ১৯৬৭-র কথা। ৬২ সালে বিহারে ভোট পড়েছিল ৪৪.৫ শতাংশ এবং ৬৭ সালে ভোট পড়ে ৫১.৫ শতাংশ বা ৭ শতাংশ বেশি। সেবারই প্রথম বিহারে কংগ্রেস সরকারের পতন হয় এবং অ-কংগ্রেসি সরকার গঠিত হয়।
একইভাবে ১৯৮০ সালে পূর্ববর্তী ১৯৭৭ সালের নির্বাচনের তুলনায় ভোটদানের হার বাড়ে প্রায় ৭ শতাংশ। ৭৭-এর ৫০.৫ থেকে সেবার ভোটের হার বেড়ে হয় ৫৭.৩ শতাংশ। সেবার জনতা সরকারের পতন হয় এবং কংগ্রেস শাসন ক্ষমতায় ফেরে।
১৯৯০ সালে ভোটদানের হার বাড়ে ৫.৮ শতাংশ। পতন হয় কংগ্রেস সরকারের। ক্ষমতায় আসে লালু প্রসাদ যাদবের দল।
বেশি ভোট পড়া প্রসঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কী বলছেন?
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় বেশি হারে ভোট পড়ার ঘটনাকে রাজ্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলেছেন জন সূরজ পার্টির প্রধান প্রশান্ত কিশোর। সাংবাদিকদের তিনি জানান, আমার অনুমান বিহারে বেশি ভোট পড়ার অর্থ বদল হচ্ছে এবং আগামী ১৪ নভেম্বর বিহারে আমরা নতুন সরকার দেখতে পাবো। পিকে-র মতে, "বেশি হারে ভোট পড়ার অর্থ ছট পূজার জন্য আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা থেকে গেছেন এবং ভোট দিয়েছেন। তারা তাদের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারকেও ভোট দিইয়েছেন। মহিলারা এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই নির্বাচনে পরিযায়ী শ্রমিকরাই এক্স ফ্যাক্টর। যারা বলেছিলেন যে মহিলাদের জন্য ১০০০০ টাকা দিলেই নির্বাচনে জয়লাভ সম্ভব, তাদের জন্য এটি একটি বার্তা।"
অন্যদিকে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধুরী দাবি করেছেন, গতকাল যে ১২১ আসনে ভোট হয়েছে তার মধ্যে ১০০ আসন পাবে এনডিএ। সাংবাদিকদের সামনে সম্রাট চৌধুরীর দাবি, এবার এনডিএ ২০১০ সালের ২০৬ আসনের রেকর্ড ভেঙে দেবে।
বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব গতকাল জানিয়েছেন, এত বেশি হারে ভোট দেবার জন্য আমি বিহারের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই। আমি এখন নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আপনারা মহাজোটের জয় নিশ্চিত করেছেন।
বিহারে অতীত নির্বাচনের রেকর্ড
২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ভোট হয়েছিল ৩ দফায়। সেবার প্রথম দফায় ভোট পড়ে ৫৫.৬৮ শতাংশ। দ্বিতীয় দফায় ৫৫.৭ শতাংশ এবং তৃতীয় দফায় ৫৯.৯৪ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে ২০২০ সালে ভোটদানের হার ছিল ৫৭.২৯ শতাংশ। ২০১৫ সালে বিহারে ভোট পড়ে ৫৬.৯১ শতাংশ। ২০১০ সালে ৫২.৭৩ শতাংশ। ২০০৫-এর অক্টোবর ও ফেব্রুয়ারিতে যথাক্রমে ৪৫.৮৫ এবং ৪৬.৫ শতাংশ।
প্রথম দফায় বিহারে যে ১২১ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে ২০২০ সালের নির্বাচনে সেই আসনগুলির মধ্যে ৭১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আরজেডি জয়ী হয়েছিল ৪২ আসনে, ৩১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস জয়ী হয় ৮ আসনে, ৪৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপি জয়ী হয় ৩০ আসনে এবং ৬৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেডিইউ জয়ী হয় ২৫ আসনে। এছাড়াও মহাজোটের বাম দলগুলি জয়ী হয় ১১ আসনে এবং এনডিএ-র ভিআইপি জয়ী হয় ৪ আসনে। ১টি আসনে জয়ী হয় এলজেপি। অর্থাৎ মহাজোট জয়ী হয়েছিল ৬১ আসনে এবং এনডিএ জয়ী হয়েছিল ৬০ আসনে।
যদিও গতবারের সমীকরণের সঙ্গে এবারের সমীকরণে কিছু পার্থক্য হবার সম্ভাবনা। কারণ গতবার চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি এবং উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল এককভাবে লড়াই করেছিল। অন্যদিকে ভিআইপি ছিল এনডিএ শিবিরে। এবার এলজেপি (রামবিলাস) এবং উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল এনডিএ শিবিরে এবং ভিআইপি মহাজোট শিবিরে। ফলে প্রাপ্ত ভোটের হারে কিছু অদল বদল হওয়াই স্বাভাবিক।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন