
বিহারে ভোটের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা না হলেও আসন রফা নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। একদিকে এনডিএ শিবিরেও যেমন আসন ভাগাভাগি নিয়ে তৎপরতা আছে অন্যদিকে মহাজোট শিবিরেও একইভাবে তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুই পক্ষেই কোন দল কত আসন পাবে তা নিয়েই মূল লড়াই। যেখানে ছোটো রাজনৈতিক দলগুলির দাবি এবং বাস্তব পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করছে দুই পক্ষই।
মহাজোটে মহা জট
মহাজোটের ক্ষেত্রে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আরজেডি এবং কংগ্রেস। এছাড়াও এই জোটে আছে সিপিআইএমএল, সিপিআইএম, সিপিআই, বিকাশশীল ইনসান পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি এবং ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা। যেহেতু এবার মহাজোট শিবিরে বেশ কিছু নতুন রাজনৈতিক দল যুক্ত হয়েছে তাই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আসন কমিয়ে এই দলগুলিকে দেওয়া হবে। যদিও নিজেদের ভাগের আসন কে কটা ছাড়বে মূল সমস্যা তা নিয়েই। মহাজোট নেতৃত্ব বিশ্বাসী যে আলোচনার মাধ্যমেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
আরজেডি-র বক্তব্য
মহাজোটের অন্যতম শরিক কংগ্রেস এবারেও গতবারের মত ৭০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছে। যদিও গতবারে ৭০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস মাত্র ১৯ আসনে জয়ী হয়েছিল। ফলে এবার কংগ্রেসের ৭০ আসনের দাবি বাস্তবসম্মত নয় বলেই মনে করছেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব।
আরজেডি নেতা তথা বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতার মতে, বিগত নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে আসন বন্টিত হোক। আসন বন্টনের ভিত্তিতে নয়। এক্ষেত্রে তেজস্বী যাদবের ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট। তিনি স্পষ্টতই গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পারফর্মেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আরজেডি-র যুক্তি, যে যে আসনে যে যে দলের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি সেই সেই আসন সেই দলের জন্য ছাড়া হোক।
কংগ্রেস যা দাবি করছে
গতবার যে ৭০ আসনে কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবারেও সেই ৭০ সংখ্যক আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছে কংগ্রেস। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতবার ভালো লড়াই করেও কিছু আসনে অল্প ব্যবধানে কংগ্রেস পরাজিত হয়। না হলে দলের আসন সংখ্যা ২৭ হতে পারতো। উল্লেখযোগ্যভাবে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিহারে ৫০টির বেশি আসনে জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়েছিল ৫ হাজার বা তার কম ভোটে।
এছাড়াও কংগ্রেস জানিয়েছে, রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক ভোটার অধিকার যাত্রা বিহার জুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যার ফল ভোটের বাক্সে পড়তে বাধ্য। এই যাত্রা কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল অনেকটাই বাড়িয়েছে। যা সরাসরি নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব ফেলবে। তবে শেষ পাওয়া খবর অনুসারে ইন্ডিয়া মঞ্চ টিকিয়ে রাখতে নিজেদের দাবির থেকে ১০ আসন ছেড়ে দিয়ে ৬০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে কংগ্রেস।
সিপিআইএমএল-এর দাবি
গতবার সিপিআইএমএল বিহারে ১৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিল ১২ আসনে। দলের সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, গতবারের ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের অন্তত ৪০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া উচিত। যদিও এত আসন সিপিআইএমএল-কে ছেড়ে দেওয়া কার্যত অসম্ভব। কারণ আরজেডি কোনোভাবেই গতবারের ১৪৪ আসন থেকে নামতে রাজি নয়। যদিও গতবারের ফলাফলের স্ট্রাইক রেট অনুসারে মহাজোটের দলগুলির মধ্যে সবথেকে ভালো ফল করেছিল সিপিআইএমএল-ই।
কংগ্রেসের ৭০ আসনের দাবি প্রসঙ্গে গত শুক্রবার সিপিআইএমএল সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, কংগ্রেসের পুরো বিষয়টি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গীতে ভাবা উচিত। একমাত্র তাহলেই বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মহাজোট লাভবান হবে।
বিকাশশীল ইনসান পার্টি
গতবার প্রথমদিকে মহাজোটের মধ্যে থাকলেও শেষ মুহূর্তে মনোমত আসন না পাওয়ায় জোট ছেড়ে বেরিয়ে যান ভিআইপি প্রধান মুকেশ সাহানি এবং এনডিএ শিবিরে যোগ দেন। সেবার ১১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মুকেশ সাহানির দল জয়ী হয় ৪ আসনে। যদিও পরবর্তী সময় এনডিএ-র সঙ্গে মতান্তরের কারণে তিনি এনডিএ ছাড়েন এবং বিরোধী মহাজোটে যোগ দেন।
এবার প্রথম থেকেই বেশি আসনের দাবি জানিয়ে আসছেন মুকেশ সাহানি। তার দাবি, ভিআইপি-কে কমপক্ষে ৬০ আসন দিতে হবে। এছাড়াও তাঁর আরও দাবি ভিআইপি-কে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ দিতে হবে। যদিও ভোটার অধিকার যাত্রায় সক্রিয় অংশ নেওয়া মুকেশ সাহানির দল আদৌ ১১-র বেশি আসন পাবে অথবা কম তা এখনও স্পষ্ট নয়।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল
আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিআইএমএল, ভিআইপি ছাড়াও মহাজোটে আছে সিপিআইএম, সিপিআই, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা এবং আরএলজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএম ও সিপিআই যথাক্রমে ৬ এবং ৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২টি করে আসনে জয়ী হয়। এবার সিপিআইএম, সিপিআই ছাড়াও আসনের অন্য দুই দাবিদার আরএলজেপি ও জেএমএম। মহাজোটে থাকার কারণে এই দুই দলকেও কিছু আসন দিতে হবে। তবে তা কত আসন তা স্পষ্ট নয়।
শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে?
বিহার বিধানসভায় মহাজোটের আসনরফা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ইন্ডিয়া মঞ্চ তথা মহাজোটবন্ধনের বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বোঝা যাবে না। ২৪৩ আসনের মধ্যে কোন দলের ভাগে কত আসন যাবে তাও স্পষ্ট হবে না। তবে এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে সমস্ত জোটসঙ্গীকে তুষ্ট করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে ভোটে লড়াই করাটাই এখন মহাজোটের কাছে সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন