Bihar Polls 25: ২৪৩ আসনেই লড়বে চিরাগের দল, প্রভাব বাড়াচ্ছে জন সূরজ, হাড্ডাহাড্ডি ভোটের ইঙ্গিত বিহারে

People's Reporter: বিহার বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন এনডিএ এবং বিরোধী মহাজোট – দুই পক্ষের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেই আসন রফা নিয়ে বিবাদ ক্রমশ বাড়ছে।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকী গ্রাফিক্স - আকাশ
Published on
Summary

• চলতি বছরের শেষের দিকে বিহার বিধানসভা নির্বাচন।

• এখন থেকেই অতিরিক্ত আসনের দাবিতে চাপ বাড়াচ্ছে দুই পক্ষের ছোটো শরিকরা।

• বিহারের রাজনীতিতে ক্রমশ প্রভাব বাড়াচ্ছেন প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর সদ্যগঠিত দল জন সূরজ।

• রাজনৈতিক মহলের মতে এবারের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আসন রফার বৈঠক চলাকালীন যথেষ্ট সংখ্যক আসন না পাওয়ায় মহাজোট-এর বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেছিলেন বিকাশশীল ইনসান পার্টির (VIP) প্রধান মুকেশ সাহানি। এরপর সরাসরি তিনি এনডিএ জোটে যোগ দেন এবং বিজেপি তাদের কোটা থেকে ১১ টি আসন ছেড়ে দেয় ভিআইপি-কে। যার মধ্যে ৪ আসনে জয়ী হয় মুকেশ সাহানির দল। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এনডিএ ছেড়ে ভিআইপি আবারও মহাজোট সঙ্গী। যদিও এবার আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে তাদের দাবি আরও বেশি আসন। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে দর কষাকষি।

এই বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হবে বিহার বিধানসভা নির্বাচন। বিহারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে যে নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি হতে চলেছে বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত। কারণ এনডিএ এবং মহাজোট ছাড়াও এবার বিহারের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সদ্য গঠিত দল জন সূরজ পার্টি। ইতিমধ্যেই বিহারের মানুষের মধ্যে বেশ কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। যদিও ইভিএমেও তিনি এই প্রভাব বজায় রাখতে পারবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ যথেষ্টই সাবধানী ভাবে জন সূরজ পার্টিকে মাথায় রেখেই এগোতে চাইছে।

বিহার বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন এনডিএ এবং বিরোধী মহাজোট – দুই পক্ষের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেই আসন রফা নিয়ে বিবাদ ক্রমশ বাড়ছে। মহাজোটে একদিকে যেমন আরজেডি প্রথমেই বলে দিয়েছে মোট ২৪৩ আসনের মধ্যে তারা লড়াই করবে ১৪০ আসনে এবং বাকি আসন ছাড়বে অন্য জোটসঙ্গীদের জন্য। কংগ্রেস জানিয়েছে গতবারের মত এবারেও তারা কমপক্ষে ৭০ আসনে লড়াই করবে। অর্থাৎ বাকি পড়ে থাকে ৩৩ আসন। যে আসন ভাগ হবে সিপিআই, সিপিআইএমএল, সিপিআইএম, ভিআইপির মধ্যে।

গতবার সিপিআইএমএল ১৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয় ১২ আসনে। সিপিআই ৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয় ২ আসনে এবং সিপিআইএম ৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয় ২ আসনে। ৭০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস পেয়েছিল ১৯ আসনে এবং ১৪৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আরজেডি পেয়েছিল ৭৫ আসন। অর্থাৎ বিরোধী মহাজোটের মোট আসন ছিল ১১০।

অন্যদিকে এনডিএ জোটের জেডিইউ ১১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪৩ এবং বিজেপি ১১০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৪ আসনে জয়ী হয়। এছাড়াও হিন্দুস্তান আওয়ামী মোর্চা ৭ আসনে লড়াই করে ৪ এবং বিকাশশীল ইনসান পার্টি ১১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪ আসনে জয়ী হয়। অর্থাৎ এনডিএ-র মোট আসন ছিল ১২৫। বিহারে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২২ আসন। অর্থাৎ গতবার কান ঘেঁষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরজা পেরিয়েছিল এনডিএ জোট।

২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এই দুই জোট ছাড়াও আসাদুদ্দিন ওয়েইসি-র অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন পেয়েছিল ৫ আসন, বিএসপি ১ এবং লোক জনশক্তি পার্টি ১টি আসন। উল্লেখযোগ্যভাবে মাত্র ১টি আসন পেলেও চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি ১৩৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছিল ২৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৫৭। চিরাগ পাসোয়ানের সরাসরি নীতিশ বিরোধিতার কারণেই সেবার ধস নেমেছিল জেডিইউ-র ভোটে এবং মাত্র ৪৩ আসনে নেমে এসেছিল জেডিইউ।

গত বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোটের মোট প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ কোটি ৫৭ লক্ষ ২ হাজার ৬৫০ এবং বিরোধী মহাজোটের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ কোটি ৫৬ লক্ষ ৯১ হাজার ৫০০। সেবার আসনের ব্যবধান যাই থাকুক না কেন, দুই প্রধান প্রতিপক্ষের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ছিল ১১ হাজার ১৫০ ভোটের। সেবার এলজেপি এনডিএ-র সঙ্গে থাকলে এই ফলাফল কী হতে পারতো এবং সেক্ষেত্রে অনেক বেশি আসনে এনডিএ জোট জয়ী হত কিনা তা আলোচনার বিষয়। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে জেডিইউ এবং বিজেপির ভোট কমেছিল যথাক্রমে ১.৪৪ শতাংশ এবং ৪.৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে আরজেডি এবং কংগ্রেসের ভোট বেড়েছিল যথাক্রমে ৪.৭৯ এবং ২.৮২ শতাংশ। একইভাবে এলজেপি-র ভোট বেড়েছিল ০.৭৭ শতাংশ।

এবারের বিহার নির্বাচনেও বড়ো জট তৈরি হতে পারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এনডিএ জোট শরিক চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি (রাম বিলাস) কে নিয়ে। কারণ বিধানসভা ভোটের বহু আগে থেকেই চিরাগ পাসোয়ানের দল ‘চিরাগ – দ্য ফিউচার সিএম’ হোরডিং-এ ভরিয়ে দিয়েছে বিহার। নিজের ঘনিষ্ঠ মহলেও চিরাগ পাসোয়ান জানিয়েছেন তিনি জাতীয় রাজনীতির বদলে রাজ্য রাজনীতিতে ফিরতে আগ্রহী। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে তিনি আসলে আসন রফার সময়ে দর কষাকষিতে এগিয়ে থাকার জন্যেই এসব করছেন। কারণ এনডিএ-র দুই প্রধান শরিক জেডিইউ এবং বিজেপির মধ্যে আসন ভাগাভাগির পর খুব বেশি আসন পড়ে থাকবে না। ফলে এখন থেকেই তিনি এনডিএ শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন। যাতে চূড়ান্ত আসন ভাগাভাগির সময় তাঁর দলের ভাগে বেশি আসন জোটে। চিরাগ পাসোয়ানের দল হোর্ডিং লাগালেও চিরাগ জানিয়েছেন, তাঁর দল মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার নয় এবং বিধানসভা নির্বাচনে এলজেপি নীতিশ কুমারের নেতৃত্বেই লড়াই করবে।

আবার ৮ মে, রবিবারই ভোজপুরে এক জনসভায় চিরাগ পাসোয়ান সম্পূর্ণ অন্য কথা বলেছেন। যে ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে রাজনৈতিক মহল। এদিন তিনি জনসভায় ঘোষণা করেন আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ২৪৩ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এলজেপি (রাম বিলাস)। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য এনডিএ-কে আরও শক্তিশালী কথা। তাঁর এই কৌশলী কথার সঠিক অর্থ কী তা স্পষ্ট নয়।

এদিন চিরাগ পাসওয়ান বলেন, তাঁর দল কোনওভাবেই এনডিএ-র থেকে আলাদা নয়। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য জোটকে আরও শক্তিশালী করা। তিনি বলেন যে আমি এবং আমার দল বিহারে ২৪৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব যাতে এনডিএ শক্তিশালী হয় এবং আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জয়ের দিকে এগিয়ে যাই। এদিনই তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, এলজেপি (রাম বিলাস) সব সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিশ্বাস করে।

এখনো পর্যন্ত এনডিএ শিবিরের মধ্যে যে সমঝোতার সম্ভাবনা আছে তাতে জেডিইউ ১০২ আসনে এবং বিজেপি ১০১ আসনে লড়াই করতে পারে। সেক্ষেত্রে পড়ে থাকবে ৪০ আসন। যে আসন ভাগাভাগি হবে চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, জিতন রাম মাঝির হ্যাম এবং উপেন্দ্র কুশহাওয়ার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চার (আরএলএম) মধ্যে। যেখানে লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে চিরাগ পাসোয়ানের কমপক্ষে ২৫ আসন পাবার সম্ভাবনা। যদিও জিতন রাম মাঝির দাবি, এলজেপি (রাম বিলাস) যত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে হ্যামকেও তত আসনই দিতে হবে। যে জট কাটাতে এনডিএ শীর্ষ নেতৃত্বকে যথেষ্টই বেগ পেতে হবে বলেই মনে হয়।

এনডিএ এবং মহাজোট ছাড়াও এবারের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের নবগঠিত দল জন সূরজ। ইতিমধ্যেই দলের প্রধান প্রশান্ত কিশোর স্পষ্ট করে দিয়েছেন কোনও এনডিএ অথবা মহাজোট – কোনও জোটের সঙ্গেই যাবে না জন সূরজ। গতকাল এক জনসভায় প্রশান্ত কিশোর বলেন, কোনও আসনে যদি আপনারা দেখেন জন সূরজ দলের পক্ষ থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত কাউকে প্রার্থী করা হয়েছে তাহলে আপনাদের অনুরোধ সেই প্রার্থীকে ভোট দেবেন না।

আগামী ২২ নভেম্বর বর্তমান বিহার বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে। অর্থাৎ তার আগেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে আগামী অক্টোবর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে বিহার বিধানসভা নির্বাচন। এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে দুই অথবা তিন পর্বে। দিওয়ালী এবং ছট পুজাকে মাথায় রেখেই নির্বাচনী সূচী তৈরি হবে। ২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন পর্বে। সেবার ২৮ অক্টোবর ৭১ আসনে, ৩ নভেম্বর ৯৪ আসনে এবং ৭ নভেম্বর ৭৮ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটের ফলাফল ঘোষিত হয়েছিল ১০ নভেম্বর।

Keywords: Bihar Elections 2025, Chirag Paswan, 243 seats, Jan Suraj, and intense battle, NDA, Mahagatbandhan, RJD, BJP, Congress, CPIM, CPI, CPIML, HAM, LJP (Ram Vilas), VIP

ছবি প্রতীকী
Bihar Polls: শারীরিক, মানসিকভাবে অসুস্থ নীতিশ কুমার, রাজ্য চালাচ্ছে আমলা ও চাটুকররা - প্রশান্ত কিশোর
ছবি প্রতীকী
Bihar Polls: মহিলারা চাইছেন নীতিশকেই, যুব ও বৃদ্ধদের পছন্দ তেজস্বী, জনমত সমীক্ষায় জানালো বিহার

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in