Agnipath: বিহারের অগ্নিপথ আন্দোলন কেন্দ্র ও বিজেপি-বিরোধী অসন্তোষের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে

আরজেডি নেতা শিবানন্দ তিওয়ারির মতে, "তরুণরা যেভাবে রাস্তায় হিংস্র হয়ে উঠেছে এবং তাদের অপমানজনক স্লোগানগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নরেন্দ্র মোদীর ক্যারিশমা এবং জনপ্রিয়তা এখন হ্রাস পাচ্ছে।"
অগ্নিপথ-এর বিরোধিতায় জ্বলছে ট্রেন, টায়ার
অগ্নিপথ-এর বিরোধিতায় জ্বলছে ট্রেন, টায়ারছবি সংগৃহীত

নরেন্দ্র মোদি সরকারের নতুন সামরিক নিয়োগ প্রকল্প - অগ্নিপথের হঠাৎ ঘোষণার কারণে বিহারের মতো দরিদ্র রাজ্যগুলি গত চার দিন ধরে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের যুব সমাজের ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত এমন একটি প্রকল্পের পরিণতি সম্পর্কে কেন্দ্র আগে পুরোপুরি আলোচনা করেনি।

পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানিয়েছেন, "গেরুয়া পার্টির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিশ্বাস করে, যে কোনও নীতি বা পরিকল্পনার পরিণতি যাই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্যারিশমা এমনই যে, দেশের মানুষ তাঁর প্রতি আস্থা রাখবে। যদিও গত চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির কারণে পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে।”

বিজেপি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিশ্বাস করে যে, নরেন্দ্র মোদি সরকার নোটবন্দী কার্যকর করেছিল এবং কালো টাকা বের করার নামে সাধারণ মানুষ তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিলো। এরপর তিনি কর সংক্রান্ত জালিয়াতি কমাতে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) প্রয়োগ করেছিলেন। যা আসলে ছোট ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং খুচরা বিক্রেতাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। এরপর তিনি তিনটি কৃষি বিল নিয়ে এসেছিলেন। যার বিরোধিতায় দেশজুড়ে এক বিশাল আন্দোলন শুরু হয় এবং ৮০০ জনেরও বেশি কৃষক তাদের জীবন হারান। এখন অগ্নিপথ প্রকল্প প্রসঙ্গে যুবকদের ধারণা, এই প্রকল্প তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার করে দিতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সমস্ত নীতিগুলি দেশের সাধারণ মানুষকে দুর্দশার মুখে ঠেলে দিয়েছে এবং এখন বিজেপি সরকার তাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে এমন কোনও বোঝা তারা নেওয়ার অবস্থায় তাঁরা নেই।

RJD-এর জাতীয় সহ-সভাপতি শিবানন্দ তিওয়ারি এই প্রসঙ্গে বলেন, "২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় নরেন্দ্র মোদি জনগণকে বার্ষিক ২ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার একটি দৃঢ় আশ্বাস দিয়েছিলেন। যদিও, গত আট বছরে তিনি শুধু ব্যর্থই হননি, প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।

তিওয়ারী আরও বলেন, যার ফলে দেশে চাকরি কমেছে এবং মোদীজি কৃষিক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত দুই বছরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কোনো নিয়োগ হয়নি। কিছু জায়গায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, কিন্তু শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মোদীজি রাতারাতি অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন নোটবন্দীকরণের মতোই। যে সব যুবকরা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো রাতারাতি ঘোষিত এই পদক্ষেপ সেইসব যুবকদের স্বপ্নকে হত্যা করেছে।

তিওয়ারির মতে, "তরুণরা যেভাবে রাস্তায় হিংস্র হয়ে উঠেছে এবং তাদের অপমানজনক স্লোগানগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে নরেন্দ্র মোদীর ক্যারিশমা এবং জনপ্রিয়তা এখন হ্রাস পাচ্ছে।"

বিজেপি বিধায়ক বিনয় বিহারী যিনি ১৭ জুন লরিয়া থেকে ফিরে আসার সময় আন্দোলনের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন: "হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রায় ২০০ জন আন্দোলনকারী আমার মাহিন্দ্রা বোলেরো এসইউভিটি আটকে দেয় এবং জানালার কাঁচ ভেঙে দেয়। আমার দুজন সশস্ত্র প্রহরী ছিল কিন্তু তারা অসহায় ছিল। আন্দোলনকারীরা মোদীজীর নামে গালি দিচ্ছিল।"

তিনি আরও জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকারের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার জন্য অসামাজিক উপাদানগুলি দৃশ্যত সক্রিয়ভাবে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে বলে আন্দোলন এখন একটি বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বহু মানুষ বিশ্বাস করেন যে বিজেপির একটি লুকানো এজেন্ডা রয়েছে, যাতে সমাজকে সংখ্যাগরিষ্ঠ (হিন্দু) এবং সংখ্যালঘু (মুসলিম) – দু’ভাগে আলাদা করা যায়। যেহেতু পরবর্তীরা গেরুয়া দলকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করার অবস্থানে নেই, তারা এই ঘটনা হয় সমর্থন করছে অথবা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে। অর্থাৎ মোদি সরকারকে নিশানা করতে তারা যুবকদের কাঁধে বন্দুক রাখছে।

বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার, বিশেষভাবে বিহারে বিজেপি নেতাদের অফিস এবং সম্পত্তি লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। বেতিয়ায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় জয়সওয়াল, বেতিয়ার ডেপুটি সিএম রেণু দেবী, পশ্চিম চম্পারন জেলার লরিয়াতে বিজেপি বিধায়ক বিনয় বিহারীর বাড়িগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং চাপড়ায় ডাঃ সিএন সিংয়ের সম্পত্তির ক্ষতি করেছে। ওয়ারসালিগঞ্জের বিজেপি বিধায়কের ওপর নওয়াদায় হামলা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা নওয়াদা, মাধেপুরা, বৈশালী এবং অন্যান্য জায়গায় বিজেপি অফিসে আগুন দিয়েছে।

শুক্রবার সকালে বেতিয়ায় বিপুল সংখ্যক যুবক উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেত্রী রেণু দেবীর বাড়িতে আক্রমণ করে এবং পাথর ছোঁড়ে।

রেণু দেবী জানিয়েছেন, "দেশের শিক্ষার্থীরা অগ্নিপথ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বোঝেনি। আমাদের শিক্ষার্থীরা অন্যায় কাজ করতে পারে না এবং হিংসায় লিপ্ত হতে পারে না। যারা হিংসায় জড়িত তারা বিরোধী দলের গুন্ডা, যারা সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। অগ্নিপথ প্রকল্পের সাথে সামরিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি জড়িত, যা কেন্দ্র দেশের যুবকদের দিতে চায়।”

বিজেপি নেতারা জোটসঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও হিংসা বন্ধ করতে ব্যর্থতার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করার চেষ্টা করেছেন।

বিজেপি রাজ্য সভাপতি সঞ্জয় জয়সোয়াল জানিয়েছেন, "যারা আমার বাড়িতে হামলা করেছে তারা অবশ্যই প্রতিরক্ষা বাহিনীর চাকরিপ্রার্থী ছিল না। আমার বাড়িতে হামলা একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল। হামলাকারীরা নিজেদের চাকরি প্রত্যাশী হিসাবে দেখিয়েছিলো এবং বেতিয়ায় আমার বাড়ি ভাঙচুর করেছিল।"

তিনি আরও বলেন, "বিক্ষোভকারীরা যেভাবে বিজেপি নেতাদের বাড়ি এবং বিভিন্ন শহরে দলীয় অফিসে হামলা চালিয়েছে, তার জন্য শুধুমাত্র বিভিন্ন জেলার প্রশাসন দায়ী। তারা আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করার জন্য কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।"

ক্ষমতাসীন JD-U সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপির সঞ্জয় জয়সওয়াল এবং রেণু দেবীর বক্তব্যের জবাব দিয়েছে। জেডি-ইউ-এর জাতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন সিং ওরফে লালন সিং তাদের পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন, দেশে যা কিছু হিংসার ঘটনা ঘটছে তা শুধুমাত্র কেন্দ্রের কারণে।

লালন সিং আরও বলেন, "অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণার পরে দেশের যুবকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। দেশের অনেক জায়গায় হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রের উচিত বিষয়টি বিবেচনা করা এবং অবিলম্বে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করা। যদি তা সম্ভব না হয় তবে সঠিকভাবে যুবকদের সাথে যোগাযোগ করে স্পষ্ট করুন যে ভবিষ্যতে এই প্রকল্প তাদের কর্মজীবনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।"

অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে গত চার দিন ধরে আন্দোলন করা ছাত্ররা দাবি করছে যে এই প্রকল্পের অধীনে কোনও যুবক সেনাবাহিনীতে যোগদান করলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

প্রকাশ সিং নামের এক চাকরিপ্রার্থী জানিয়েছেন, "একজন যুবকের সেনা জওয়ান হওয়ার জন্য কমপক্ষে এক বছরের উপযুক্ত সামরিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন এবং একজন সেনা জওয়ানের সীমান্তে দায়িত্ব পালন করতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ বছর সময় লাগে৷ অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনে, ৬ মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এবং পাকিস্তান ও চীন সীমান্ত সহ দেশের যে কোন জায়গায় তাদের মোতায়েন করা হবে। একজন আংশিক দক্ষ সৈনিক সীমান্তে টিকে থাকতে পারে না, এটি কেবল সেই সৈনিকের জন্য নয়, যেখানে তাদের পোস্টিং হবে তাদের জন্যও আত্মঘাতী হবে।" তিনি গত ৫ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অন্য এক চাকরি প্রত্যাশী রাকেশ কুমার বলেন: "ছ’মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ জঙ্গি গোষ্ঠী ফিদায়িনদের (আত্মঘাতী স্কোয়াড) সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরূপ। তারা (জঙ্গি গোষ্ঠী) ৩ থেকে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেয় এবং আত্মঘাতী মিশনে শত্রু দেশে পাঠায়। কেন্দ্রীয় সরকার কি অগ্নিবীরদের মাধ্যমে একটি নতুন আত্মঘাতী রেজিমেন্ট গঠন করতে চায়? নরেন্দ্র মোদী সরকারের উচিত অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে ছয় মাসে যুবকদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তার সামরিক প্রশিক্ষণের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা।"

অগ্নিপথ-এর বিরোধিতায় জ্বলছে ট্রেন, টায়ার
Agnipath: 'অগ্নিপথ' প্রকল্প কতটা সঠিক, খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in