
আসামে এক বেসরকারি সংস্থাকে প্রায় ৩০০০ বিঘা জমি দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন তুললো গুয়াহাটি হাইকোর্ট। আসামের দিমা হাসাও (Dima Hasao) জেলায় ওই জমি দেওয়া হয়েছে। যে জমি নিয়ে শুনানির সময় বিচারপতি সঞ্জয় কুমার মেহদি এই বিশাল পরিমাণ জমি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
গতকালের শুনানি পর্বে (Case No WP(C)/337/2025) বিচারপতি সঞ্জয় কুমার মেহদি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “৩০০০ বিঘা! একটা পুরো জেলা? এখানে কী চলছে? ৩০০০ বিঘা এক বেসরকারি সংস্থাকে? এটা কী ধরণের সিদ্ধান্ত? এটা কি কোনও রসিকতা নাকি অন্যকিছু? আপনার প্রয়োজনই মূল বিষয় নয়…জনস্বার্থই মূল বিষয়।
শুনানিতে সিমেন্ট কোম্পানির পক্ষের আইনজীবী বলেন, যে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে তা অনুর্বর জমি এবং কারখানা পরিচালনার জন্য এই জমি প্রয়োজন। যদিও আদালত এই বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে এই বিশাল বরাদ্দ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য তলব করেছে।
পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে, এই জেলাটি ভারতের সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্গত জেলা। তাই সবার আগে এখানে বসবাসকারী উপজাতিদের অধিকার এবং স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আদালত আরও জানিয়েছে, যে ডিমা হাসাও জেলার উমরাংসো অঞ্চলটিতে উষ্ণ প্রস্রবণ আছে এবং এখানে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি, বন্যপ্রাণীর বিরতিস্থল হিসেবে চিহ্নিত। এই অঞ্চলকে পরিবেশগত হটস্পট হিসেবেও দেখা হয়।
আসামের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বহু আগে থেকেই বেসরকারি সংস্থাকে বিশাল পরিমাণ জমি দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। এই বিষয় আসাম কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন কুমার বোরা এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি জানিয়েছিলেন এবং স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, এই জেলার প্রায় ৯০০০ বিঘা জমি রাজ্যের বিজেপি সরকার, বিজেপি ঘনিষ্ঠ এক বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছে। এই পদক্ষেপে তারা স্থানীয় মানুষের আবেগ অথবা অধিকারের কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না। বিশেষ করে স্থানীয় উপজাতি জনগোষ্ঠী বারবার এই জমি হস্তান্তরে আপত্তি জানিয়েছে। ওই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছিল, এটা শুধুমাত্র জমি সংক্রান্ত কোনও বিষয় নয়। এটা ডিমা হাসাওয়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকা এবং অধিকার রক্ষার বিষয়।
গতকাল আদালতের নির্দেশের পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আদানিদের কাছে সিমেন্ট কারখানার জন্য ৩,০০০ বিঘা (৮১ মিলিয়ন বর্গফুট) আদিবাসী জমি হস্তান্তর করেছেন। হাইকোর্টের একজন বিচারক হতবাক হয়ে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, "এটা কি রসিকতা? আপনি তো পুরো জেলা দিয়ে দিচ্ছেন। আপনার প্রয়োজন কোনও বিষয় নয়, জনস্বার্থই একমাত্র বিষয়।"
বিবৃতিতে কংগ্রেস আরও জানিয়েছে, “বিজেপি সরকারের কর্মকাণ্ড স্পষ্টতই স্পষ্ট যে তারা নির্লজ্জভাবে দেশের সম্পদ মোদীর মিত্র আদানিদের হাতে তুলে দিচ্ছে, যেখানে সাধারণ গরিব মানুষকে সংগ্রামের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি জনগণের জন্য শাসন নয়; এটি মিত্র আদানির জন্য শাসন। তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের জবাবদিহি করার এবং এমন একটি সরকারের দাবি করার সময় এসেছে যা সত্যিকার অর্থে জনগণের সেবা করে।”
আসাম সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মহাবল সিমেন্টস (Mahabal Cements) নামক এক সংস্থাকে খনন কাজের জন্য প্রায় ৩০০০ বিঘা জমি দেওয়া হয়। গতকাল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে মহাবল সিমেন্টস আসলে আদানিদের সংস্থা। যদিও ১৮ আগস্টই এক বিবৃতিতে আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ‘মহাবল সিমেন্টস এর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই।”
ষষ্ঠ তফশিল প্রসঙ্গে
আসামের তিনটি জেলা ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্গত। যার মধ্যে আছে বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন, কারবি আংলং অটোনমাস কাউন্সিল এবং দিমা হাসাও অটোনমাস ডিস্ট্রিট কাউন্সিল। ভারতের উত্তর পূর্বে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্গত ১০টি জেলা আছে।
ষষ্ঠ তফশিলের মূল লক্ষ্য, উপজাতীয়দের জমি ও সম্পদ রক্ষা করা এবং অ-উপজাতীয় ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের কাছে এই ধরনের সম্পদ হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা। এছাড়াও উপজাতীয় সম্প্রদায়গুলি অ-উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর দ্বারা শোষিত বা প্রান্তিক না হয় তা নিশ্চিত করা এবং তাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচয় সংরক্ষণ এবং প্রচার করা।
ভারতের সংবিধানের ধারা ২৪৪(২) অনুসারে ষষ্ঠ তফসিলের বিধানগুলি আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম রাজ্যের উপজাতি অঞ্চলের প্রশাসনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন