
রবিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সাংবাদিক সম্মেলনের পর সোমবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে ফের আক্রমণ করা হল জ্ঞানেশ কুমারকে। এদিন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বিজেপি মুখপাত্রের মত আচরণ করছেন। তিনি ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision - SIR) নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। গগৈ আরও বলেন, প্রশ্নের উত্তর দেবার বদলে তিনি সরাসরি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে আক্রমণ করছেন।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস ছাড়াও অংশ নেন ডিএমকে (DMK), আরজেডি (RJD), সমাজবাদী পার্টি (SP), সিপিআইএম (CPIM), তৃণমূল (TMC) সহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতৃত্ব। কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের সংবিধান দেশের সমস্ত সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার দিয়েছে। দেশের গণতন্ত্র এর ওপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে আছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সেই অধিকার রক্ষা করা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আসা কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না এবং তিনি তাঁর দায়িত্ব থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এদিন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব বলেন, খুব ভালো হয় যদি নির্বাচন কমিশন জানায় যে কেন এত তাড়াহুড়ো করে বিহারে এসআইআর করতে হল। যেখানে ভোট মাত্র তিন মাস দূরে সেখানে কেন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে তারা তাড়াহুড়ো করে এসআইআর-এর ঘোষণা করলেন?
গৌরবের অভিযোগ, এটা স্পষ্ট যে নির্বাচন কমিশন কিছু আধিকারিকের হাতে বন্দী। সেই সব আধিকারিকরা কোনওরকম অনুসন্ধান করতে রাজী নন। তিনি মনে করিয়ে দেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং অবাধ নির্বাচন করানো কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু কমিশনের কিছু আধিকারিক বিরোধীদের আনা কোনও অভিযোগেরই গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং তদন্ত করছেন না।
সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব বলেন, একদিকে নির্বাচন কমিশন লোকসভার বিরোধী দলনেতার কাছে হলফনামা চাইছে। আর সমাজবাদী পার্টি হলফনামা সহ ১৮ হাজার অভিযোগ দায়ের করেছে। এইসব ভোটারদের নাম ২০২২-এ ভোটার তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আজ পর্যন্ত তার কোনোটারই উত্তর দেয়নি। ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশে ভোটের সময় অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেছিলেন যে সমাজবাদী পার্টির সমর্থকদের নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে।
আরজেডি-র মনোজ ঝা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, গতকাল আমরা আমাদের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কথা শুনতে চাইছিলাম। কিন্তু দেখলাম একজন বিজেপি মুখপাত্র সেখানে কথা বলছেন।
শিবসেনা (ইউবিটি)-র অরবিন্দ সাওন্ত বলেন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বিজেপি মুখপাত্রের মত আচরণ করছেন।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, যে ভোটার তালিকা অনুসারে ২০২৪ সাধারণ নির্বাচন হয়েছে তা যদি সঠিক না হয়ে থাকে তাহলে অবিলম্বে এই লোকসভা ভেঙে দেওয়া হোক। তিনি আরও বলেন, এই ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকার জন্য প্রাক্তন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত এবং অবিলম্বে লোকসভা ভেঙে দেওয়া উচিত।
রবিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (Chief Election Commissioner) জ্ঞানেশ কুমার (Gyanesh Kumar) এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিহারের এসআইআর-এর (Bihar SIR) উদ্দেশ্য ভোটার তালিকাকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং তালিকা থেকে সমস্ত ত্রুটি দূর করা। তিনি আরও বলেন, কমিশনের লক্ষ্য প্রতিটি যোগ্য ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত করা এবং সমস্ত অযোগ্য ভোটারের নাম তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা।
তিনি আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ১০টি এসআইআর হয়েছে। যার একমাত্র উদ্দেশ্য ভোটার তালিকাকে স্বচ্ছ করা। বিহারে সম্প্রতি যে এসআইআর করা হচ্ছে তার উদ্দেশ্যও একই। কারণ এই সংক্রান্ত বহু অভিযোগ জমা পড়েছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন