সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR)-এ বাদ পড়া ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম ওয়েবসাইটে আপলোড করলো নির্বাচন কমিশন (ECI)। আগামী ১৯ আগস্টের মধ্যে এই নামের তালিকা প্রকাশ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল কমিশন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ৫৬ ঘণ্টার মধ্যেই কারণ সহ সেই তালিকা জেলা শাসকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
রবিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (Chief Election Commissioner) জ্ঞানেশ কুমার (Gyanesh Kumar) এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিহারের এসআইআর-এর (Bihar SIR) উদ্দেশ্য ভোটার তালিকাকে পরিচ্ছন্ন রাখা এবং তালিকা থেকে সমস্ত ত্রুটি দূর করা। তিনি আরও বলেন, কমিশনের লক্ষ্য প্রতিটি যোগ্য ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত করা এবং সমস্ত অযোগ্য ভোটারের নাম তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা।
তিনি আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ১০টি এসআইআর হয়েছে। যার একমাত্র উদ্দেশ্য ভোটার তালিকাকে স্বচ্ছ করা। বিহারে সম্প্রতি যে এসআইআর করা হচ্ছে তার উদ্দেশ্যও একই। কারণ এই সংক্রান্ত বহু অভিযোগ জমা পড়েছিল।
এদিন সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন বহু ভোটারের বাড়ির নম্বরের জায়গায় শূন্য লেখা আছে। এটা কীভাবে সম্ভব? এর উত্তরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, বহু জায়গাতেই পঞ্চায়েত এবং পুরসভা বাড়ির নম্বর দেয় না। কিন্তু কমিশনকে সেই সব ভোটারের নামও তালিকাভুক্ত করতে হয়। এগুলো সেভাবেই হয়েছে। কিন্তু তাদের ভুয়ো ভোটার বলে দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
এদিন সাংবাদিকরা তাঁকে মহারাষ্ট্রের ভোটার তালিকার গরমিলের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করাতে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কেন খসড়া ভোটার তালিকার সময় এই অভিযোগ জানায়নি। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তাদের মনে হয়েছে ভোটার তালিকায় ভুল আছে? মহারাষ্ট্রে কোনও ভোটারের বিরুদ্ধে তথ্য সহ কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। আট মাস আগে নির্বাচন হয়েছে। কেন কোনও ইলেকশন পিটিশন দাখিল করা হয়নি?
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সাংবাদিক সম্মেলনে ভোটারদের ছবি দেখিয়েছেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য, কদিন আগের সাংবাদিক সম্মেলনে ভোটারদের অনুমতি ছাড়াই তাদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কি ভোটারদের ছবি প্রকাশ করা উচিত?
প্রসঙ্গত, গত ১৪ আগস্ট বিহারের ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Bihar SIR) মামলার শুনানি ছিল। যেখানে মামলাকারীদের দাবি ছিল, নির্বাচন কমিশন বলছে বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। অথচ তাদের কোন তালিকা দেওয়া হয়নি। মামলাকারীদের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, বাদ পড়া ওই ৬৫ লক্ষ ভোটার কারা, কারা স্থায়ীভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, কারা মৃত, এইসব তথ্য প্রকাশ করা উচিত।
এই মামলায় অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, যে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গেছে, তা মঙ্গলবার ১৯ আগস্ট বিকেল ৫টার মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। শীর্ষ আদালতের আরও নির্দেশ, ২০২৫ সালের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, অথচ খসড়া তালিকায় নেই, তাঁদের সকলের নাম যেন জেলাস্তরের ওয়েবসাইটে থাকে। পাশাপাশি কী কারণে তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তারও উল্লেখ থাকতে হবে। প্রত্যেক জেলাস্তরের নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে এই তালিকা থাকতে হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন