
বিহারের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ৬৫ লক্ষের নাম প্রকাশ করতে হবে ওয়েবসাইটে। পাশাপাশি, উল্লেখ করতে হবে, তাঁদের নাম বাদ পড়ার কারণ। বৃহস্পতিবার এসআইআর (Special Intensive Revision - SIR) মামলার শুনানিতে জানাল সুপ্রিম কোর্ট (The Supreme Court)। এছাড়া, আধার কার্ড (Aadhar Card) প্রামাণ্য নথি হিসেবে গণ্য হবে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, পুনর্বিবেচনার আবেদনে আধার কার্ড জমা দিতে পারবেন ভুক্তভোগীরা। এই মর্মে নির্বাচন কমিশনকে বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বিহারের ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Bihar SIR) মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। যেখানে মামলাকারীদের দাবি ছিল, নির্বাচন কমিশন বলছে বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। অথচ তাদের কোন তালিকা দেওয়া হয়নি। মামলাকারীদের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, বাদ পড়া ওই ৬৫ লক্ষ ভোটার কারা, কারা স্থায়ীভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, কারা মৃত, এইসব তথ্য প্রকাশ করা উচিত।
বৃহষ্পতিবার এই মামলায় অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, যে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গেছে, তা মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। শীর্ষ আদালতের আরও নির্দেশ, ২০২৫ সালের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, অথচ খসড়া তালিকায় নেই, তাঁদের সকলের নাম যেন জেলাস্তরের ওয়েবসাইটে থাকে। পাশাপাশি কী কারণে তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তারও উল্লেখ থাকতে হবে। প্রত্যেক জেলাস্তরের নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে এই তালিকা থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিকে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের যদি সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকে, তা হলে সেখানেও বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করতে হবে।
বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘‘আপাতত ধরে নেওয়া যাক, নির্বাচন কমিশনের বিশেষ ও নিবিড় সমীক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গেছে। আপনারা বলছেন, ২২ লক্ষ ভোটার মারা গিয়েছেন। আবার অন্য পক্ষ বলছে কে মৃত আর কে জীবিত তা নিয়েই বিরোধ রয়েছে।"
শীর্ষ আদালত আরও জানিয়েছে, আধার কার্ডই নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রধান নথি। বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘আধার কার্ড স্থায়ী বসবাসের প্রমাণপত্র হিসাবে এবং পরিচয়পত্র হিসাবে আইনত স্বীকৃত একটি নথি। সে ক্ষেত্রে আধার কার্ড গ্রহণ করা হবে না কেন?’’ শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও রকম সমস্যা হলে পরিচয় এবং বাসস্থানের প্রমাণ হিসাবে আধার কার্ড নিয়ে নির্বাচনী আধিকারিকদের দ্বারস্থ হতে পারবেন নাগরিকেরা।
বিচারপতি সূর্য কান্তের পর্যবেক্ষণ, নাগরিকদের নিজস্ব সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যদি ২২ লক্ষ মানুষ মারা গিয়ে থাকেন, তা হলে বুথ পর্যায়ে কেন তা প্রকাশ করা হচ্ছে না? যদি এই পরিসংখ্যান জনসমক্ষে আসে, তা হলে এ নিয়ে আর বিতর্ক থাকবে না।’’
বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার অনুমোদন নেই। কেন নাম বাদ গিয়েছে তা জানার মৌলিক অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। এ জন্য সর্বাধিক প্রচার প্রয়োজন। গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা চাই। নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হোক। যদি বিএলও দফতরের সামনে নামের তালিকা ঝোলানো যায়, তা হলে ওয়েবসাইটে নয় কেন?’’
এছাড়া ২০০৩ সালে কোন কোন নথি জমা নেওয়া হয়েছিল, তা আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কী পদ্ধতিতে ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছিল, কমিশনকে তা-ও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।আগামী ২২ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন