TCS Lay Off: কর্মীদের ইস্তফা দিতে চাপ দিচ্ছে টিসিএস, 'আইন মানা হচ্ছে না' - অভিযোগ KITU-র

People's Reporter: অভিযোগ, ইস্তফা দিলে তিন মাসের বেতন দেওয়া হবে। শর্ত প্রত্যাখ্যান করলে কোনও ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাঁদের ছাঁটাই করা হবে। তাঁদের কোনও রিলিভিং লেটার দেওয়া হবেনা বলেও জানিয়েছে সংস্থা।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকী গ্রাফিক্স - আকাশ
Published on

টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS) কর্মীদের ইস্তফা দিতে বাধ্য করছে। সংস্থার বেশ কিছু কর্মীর পক্ষ থেকে এমনটাই অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ইস্তফা না দিলে তাঁদের বকেয়া আটকে দেওয়া এবং তাঁদের কালো তালিকাভুক্ত (Blacklisting) করার হুমকিও দিচ্ছে সংস্থা। এর আগেই টিসিএস-এর পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণভাবে ১২ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, যা বিশ্বজুড়ে সংস্থার মোট কর্মী বাহিনীর ২ শতাংশ।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংস্থার এক কর্মী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, “ইস্তফার শর্ত হিসেবে সংস্থা ইনসেন্টিভ হিসেবে তিন মাসের বেতন দিতে চাইছে। কিন্তু  কেউ সেই শর্ত প্রত্যাখ্যান করলে কোনও ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাঁদের ছাঁটাই করা হবে এবং তারা কোনও রিলিভিং লেটার দেওয়া হবেনা বলেও জানিয়েছে সংস্থা।” ওই কর্মী আরও জানিয়েছেন, এটা কার্যত হুমকির সমান। কর্মীরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাচ্ছে।

দ্য নিউজ মিনিট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, সংস্থার দুই কর্মী জানিয়েছেন, সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে তাঁদের ফোন সুইচ অফ করতে বলা হয়। এরপর বৈঠকে তাঁদের ইস্তফা দেবার জন্য চাপ দেওয়া হয়। যতক্ষণ না তারা ইস্তফা দিতে সম্মত হচ্ছেন ততক্ষণ তাঁদের কারোর সঙ্গে আলোচনা করা বা বৈঠক ছেড়ে বেরোতেও বাধা দেওয়া হয়। যদিও চাপের মুখেও ওই কর্মীরা ইস্তফা না দিয়েই বৈঠক ছাড়েন।

টিসিএস বেঙ্গালুরু অফিসের কিছু কর্মী জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০০ জন কর্মী ইস্তফা এই ক্যাম্পাস থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এবং প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন কর্মীকে ডেকে ইস্তফা দিতে বলা হচ্ছে। সূত্র অনুসারে, ম্যানেজারদের ‘অপ্রয়োজনীয়’ কর্মীদের চিহ্নিত করতে বলা হচ্ছে, যা আসলে জোর করে ছাঁটাই করার প্রক্রিয়া।

দ্য কর্ণাটক স্টেট আইটি/আইটিজ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (KITU)-র পক্ষ থেকে টিসিএস প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, সংস্থা আইনানুগভাবে ছাঁটাই করছে না। টিসিএস সরকারি নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে ছাঁটাই করছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে কোনও সংস্থায় ১০০-র বেশি কর্মী থাকলে সেক্ষেত্রে ছাঁটাই করার আগে সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। গত ২৯ জুলাই এই বিষয়ে কর্ণাটকের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বসে কিটুর প্রতিনিধিবৃন্দ। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোম্পানির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গণ ছাঁটাই এবং ১৯৪৭ সালের শিল্প বিরোধ আইন এবং কর্ণাটক সরকার কর্তৃক জারি করা কর্মসংস্থানের শর্তাবলী লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে।

টিসিএস গণ ছাঁটাই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আইটি অ্যান্ড আইটিইএস ডেমোক্রেটিক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনে (IIDEA)-র প্রতিনিধিরাও। ছাঁটাই প্রসঙ্গে ইউনিয়নের এক নেতা জানিয়েছেন, “এক দশক বা তার বেশি সময় ধরে চাকরি করা কর্মীদের কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই, কোনও মর্যাদা না দিয়েই চলে যেতে বলা হচ্ছে। যদি টিসিএস সত্যিই এক নতুন প্রযুক্তি যুগে পা রাখতে চায়, তাহলে কেন প্রকৃত পুনর্দক্ষতা কর্মসূচি এবং চাকরির নিরাপত্তা দেবে না?”

সাম্প্রতিক সময়ে বহু চর্চিত টিসিএস-এর ছাঁটাই প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক এক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন জানিয়েছে, এই ছাঁটাইয়ের মূল লক্ষ্য হল টিসিএস-এর অভ্যন্তরীণ কাঠামোকে নতুন প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-ভিত্তিক পরিষেবার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। সংস্থার দাবি, এর জন্য কর্মীদের পুনঃপ্রশিক্ষণ এবং পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।

যে বিবৃতি প্রসঙ্গে কর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অটোমেশনের মাধ্যমে কর্মজীবনের ভারসাম্য বৃদ্ধি করা উচিত, কখনই অটোমেশনকে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।

প্রসঙ্গত, ২০২৫-এ বিশ্বজুড়েই প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গণহারে ছাঁটাই চলছে। ছাঁটাই সংক্রান্ত তথ্যের প্ল্যাটফর্ম Layoffs.fyi অনুসারে, এই বছর এখনও পর্যন্ত ১৭৬টি সংস্থা থেকে ৮০,৮৪৫ এরও বেশি প্রযুক্তি কর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। মাইক্রোসফ্ট, গুগল, অ্যামাজন এবং মেটা সহ বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থা সাম্প্রতিক মাসগুলিতে নতুন ব্যবসায়িক পুনর্গঠন এবং খরচ কমানোর ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মী ছাঁটাই ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে সবথেকে বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে ইনটেল ও মাইক্রোসফট। গত এপ্রিল মাসে ইনটেল ২২ হাজার এবং মে মাসে মাইক্রোসফট ৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। এছাড়াও ইনটেল থেকেও আরও বড়ো সংখ্যায় কর্মী ছাঁটাই হবে।

ছবি প্রতীকী
TCS: ১২,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের আবহে প্রকাশ্যে TCS-এর CEO-র বেতন! শুরু সমালোচনা
ছবি প্রতীকী
TCS Lay Off: ১২,০০০ কর্মী ছাঁটাই রুখতে ১৯ আগস্ট দেশজুড়ে টিসিএস দপ্তরের সামনে প্রতিবাদের ডাক সিটুর

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in