
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-কে নজরে রেখে প্রায় ১২,০০০ কর্মী ছাঁটাই করতে চলেছে ভারতের বৃহত্তম আইটি পরিষেবা প্রদানকারী টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS)। এর প্রতিবাদে আগামী ১৯ আগস্ট দেশের সমস্ত টিসিএস অফিসের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সিআইটিইউ (CITU)। তাদের সমস্ত ইউনিয়ন এবং দেশের সমস্ত তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের এই কর্মসূচিতে সামিলের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার সিআইটিইউ সাধারণ সম্পাদক তপন সেন গণছাঁটায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, "এটি এমন এক সময় ঘটল, যখন সংস্থাটি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ২,৫৫,৩২৪ কোটি সমষ্টিগত রাজস্ব অর্জন করেছে। গত বছরে তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি এবং ২৪.৩ শতাংশ অপারেটিং প্রফিট মার্জিন, যা শিল্পক্ষেত্রে সর্বোচ্চ"।
তিনি আরও বলেন, "এই সময়েই টিসিএস-এর পরিচালনা পর্ষদ ৪৫,৫৮৮ কোটি টাকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। যা আগের বছরের তুলনায় ২০% বেশি। অর্থবর্ষ ২০২৫-এ প্রতি কর্মচারীর আয় ছিল ৪৫ লক্ষ, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫.৮% বৃদ্ধি। সাধারণ কর্মচারীদের বেতন না বাড়লেও, সিইও'র পারিশ্রমিক ২৮ কোটিরও বেশি, যা দুই অঙ্কে বৃদ্ধি পেয়েছে"।
তপন সেনের দাবি, বর্তমানে সংস্থার কাছে ৪৭,০০০ কোটিরও বেশি নগদ মজুত রয়েছে। যা ভারতীয় বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম সর্বাধিক মূলধন। তা সত্ত্বেও কর্মচারী রক্ষার বদলে গণছাঁটাই বেছে নিয়েছে সংস্থাটি। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই কর্মকাণ্ডের ফলে সংস্থার আসল রূপ সকলের সামনে এসেছে। মুনাফা ছাড়া সংস্থার কর্মীদের রক্ষার দায়িত্ব নেই।
বর্তমানে টিসিএস 'স্কিল ফিটমেন্ট' এর নামে মধ্য ও উচ্চ পর্যায়ের অভিজ্ঞ কর্মীদের নিশানা করছে। যাঁরা ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে সংস্থায় কর্মরত। তাঁদের বাদ দিয়ে ৮০-৮৫% কম বেতনে নতুনদের নিয়োগ করা হচ্ছে। সিআইটিইউ-এর মতে, নতুনদের নিয়োগের মাধ্যমে 'জুনিয়রাইজেশন স্ট্র্যাটেজি' বাস্তবায়ন করছে টিসিএস। যার ফলে বেতন কমিয়ে লাভের মার্জিন বাড়ানো যায়। অন্যদিকে, উচ্চপদস্থদের আয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
এই কর্মী ছাঁটাই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি কেন্দ্র সরকার। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিআইটিইউ। ইউনিয়নের মতে, কেন্দ্রের কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক মেলবন্ধন টিসিএস-কে একাধিক সরকারি প্রকল্পে সুবিধা দিয়ে চলেছে। যার মধ্যে রয়েছে বিএসএনএল-এর ৪জি/৫জি প্রকল্প, প্রতিরক্ষা পেনশনারদের স্পার্স প্রকল্প, পরবর্তী প্রজন্মের পাসপোর্ট প্রকল্প এবং ডিজিটাল ভোটার তালিকা ব্যবস্থা। ইউনিয়নের অভিযোগ, জনগণের করের টাকায় প্রকল্প চালানো হলেও, মুনাফা যাচ্ছে কর্পোরেট পুঁজিপতিদের কাছে। এর ফলে চাকরি হারাচ্ছেন সাধারণ কর্মীরা।
এরপরেই তপন বলেন, সংস্থার এই 'স্বেচ্ছা পদত্যাগ'-এর চাপ প্রয়োগ, কাজের বোঝা বাড়ানো, পারফরম্যান্সের নামে কর্মী ছাঁটাই সবটাই ১৯৪৭ সালের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট অ্যাক্ট-এর লঙ্ঘন। যার ধারা অনুযায়ী, ১০০ জনের বেশী কর্মী ছাঁটাই করতে হলে সরকারের পূর্ব অনুমতি বাধ্যতামূলক।
বিবৃতিতে সিআইটিইউ দাবি তুলেছে, টিসিএস-এর বিরুদ্ধে ধারা ২৫ কিউ অনুযায়ী ছাঁটাই প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের এবং ২৫টি ও ২৫ইউ অনুযায়ী অন্যায্য শ্রমিক আচরণের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এই সমস্যা কেবল টিসিএস-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা একই পথে হাঁটছে। যার দাবিতে আগামী ১৯ আগস্ট কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সিআইটিইউ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন