

টিসিএস-এ ছাঁটাই কত? তা নিয়ে বিতণ্ডা চরমে। টিসিএস-এ ছাঁটাই সংক্রান্ত মহারাষ্ট্র সরকারের দেওয়া তথ্যের সরাসরি বিরোধিতা করলো তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার ইউনিয়ন ফোরাম ফর আইটি এমপ্লয়িজ ইন্ডিয়া – এফআইটিই (Forum for IT Employees India – FITE)।
মঙ্গলবার মহারাষ্ট্র সরকার জানায় টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (Tata Consultancy Services – TCS) চলতি আর্থিক বছরের শেষ দুই ত্রৈমাসিকে পুণে সিটি ক্যাম্পাস থেকে ৩৭৬ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। যদিও সরকারের দেওয়া এই তথ্যের সরাসরি বিরোধিতা করেছে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের সংগঠন এফআইটিই।
মহারাষ্ট্রের শ্রমমন্ত্রী আকাশ পান্ডুরঙ ফান্ডকর বিধান পরিষদে জানান, টিসিএস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, কোম্পানির পুনের ক্যাম্পাসে ৪৫,৫৭৫ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। তিনি আরও বলেন, “চলতি আর্থিক বছরের দুটি ত্রৈমাসিকে, আইটি কোম্পানিটি কর্মীদের সাথে আলোচনা করে, নোটিশ দিয়ে এবং বেতন পরিশোধ করে পুনে শহর থেকে ৩৭৬ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছে।” “কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ছাঁটাইকৃত কর্মীরা মধ্যম ও ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা স্তরের পদে ছিলেন এবং তারা স্পষ্ট করেছে যে এই ছাঁটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশনের ব্যবহারের কারণে হয়নি।”
সরকারের এই বিবৃতি প্রসঙ্গে এফটিআইই প্রধান পবনজিত মানে জানিয়েছেন, এই পরিসংখ্যান সম্পূর্ণ ভুল এবং মিথ্যা… এটা কোনোভাবেই ৩৭৬ নয়। আসলে ছাঁটাই কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২,৫০০। এই প্রসঙ্গে মানে জানান, যে ৩৭৬ জন কর্মীকে টিসিএস ছাঁটাই করেছে তা ছাড়াও আরও ২ হাজারের বেশি কর্মীকে টিসিএস থেকে কাজ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এই নীরব ছাঁটাই-এর তথ্য কোথায়?
এফটিআইই প্রধান আরও জানান, এই কর্মীদের কাজ ছাড়তে বলা হয়েছে। ছাঁটাই করা একরকমের আর জোর করে কাজ ছাড়তে বাধ্য করা আর একরকম। টিসিএস দাবি করেছে ২ হাজারের বেশি কর্মী ব্যক্তিগত কারণে তাদের সংস্থা থেকে কাজ ছেড়েছেন। তাদের ছাঁটাই করা হয়নি। সরকার ৩৭৬ কর্মী ছাঁটাই সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে তা টিসিএস যাদের ছাঁটাই করেছে সেই সংখ্যা। কিন্তু টিসিএস যাদের কাজ ছাড়তে বাধ্য করেছে সেই কর্মী সংখ্যা কোথায়?
টিসিএস-এর বিরুদ্ধে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানিয়ে এফআইটিই জানিয়েছে, তারা রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি লিখে এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। “আমরা চাই রাজ্য সরকার টিসিএস-এর এই ছাঁটাইয়ের বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করুক। কেন কর্মীদের নিয়োগ করার পর কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও তাদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে? এত বড় এক আইটি কোম্পানি কীভাবে কর্মীদের সাথে এই ধরণের নির্মম আচরণ করতে পারে? কিছু কর্মী ১০-১৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। এমনকি তাদেরও রাতারাতি চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তারা তাদের পরিবার নিয়ে কোথায় যাবে?”
মানে আরও বলেন, যেসব কর্মীরা কোম্পানির উন্নতির জন্য নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন, তাদের প্রতি এটি এক অমানবিক আচরণ। আর একারণেই আমরা সরকারের কাছে হস্তক্ষেপ করার এবং একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে এই বড়ো আইটি সংস্থার এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ হয়”।
তিনি আরও বলেন, গত আর্থিক বছরে টিসিএস-এর মোট লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ৪৫,৬১২ কোটি টাকা। “যখন তারা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এত বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারে, তখন তারা কি তাদের নিজেদের কর্মীদের জন্য খেয়াল রাখতে পারে না? যারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে, নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা ভুলে যায় এবং পরিবারের জন্য সামান্যই সময় পায়। আমরা তাদের লভ্যাংশের ইতিহাস খুঁজে বের করেছি, কারণ টিসিএস ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের জন্য ১,২০০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কোনো কর্মীই কিছু পায়নি।”
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন