
* ডিজিটাল অ্যারেস্টের নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে বিভিন্ন শহরে।
* এবার প্রতারণার ফাঁদে ৫৬ লক্ষ টাকা খোয়ালেন গাজিয়াবাদের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা।
* তথ্য অনুসারে ভারতে ডিজিটাল অ্যারেস্ট সংক্রান্ত কোনও আইনি বিধান নেই।
ফের ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদ। আর যে ফাঁদে ২৮ দিন ধরে আটকে থেকে ৫৬ লক্ষ টাকা খোয়ালেন গাজিয়াবাদের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। ৫৫ বছর বয়সী শিক্ষিকা অর্চনা খাড়ের কাছে এপ্রিল মাসের ১ তারিখ টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার নাম করে এক ফোন আসে। সেই ফোন ধরার পরেই তিনি প্রতারকদের ফাঁদে পড়েন।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে গাজিয়াবাদের এসিপি অম্বুজ সিং যাদব সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষিকার কাছ থেকে তাঁরা এই ডিজিটাল অ্যারেস্টের বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এই বিষয়ে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
ঘটনার সূত্রপাত এপ্রিল মাসের ১ তারিখ। যেদিন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার কাছে অজানা এক নম্বর থেকে ফোন আসে এবং তাঁকে বলা হয় তাঁর ফোন নম্বর অন্যায় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী দু’ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ফোন নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিশদে জানার জন্য তাঁকে ফোনে ১ নম্বর বোতাম টিপতে বলা হয়। এরপরেই তিনি ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদে পড়েন এবং ২৮ দিন ধরে এই ফাঁদে আটক থেকে তিনি ৫৬ লক্ষ টাকা খেসারত দেন।
ঘটনার শিকার অর্চনা খাড়ে পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁকে বলা হয় তাঁর ফোন নম্বর হাওলা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। বলা হয়, তাঁকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হয়েছে। এরপর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে প্রতারকদের নির্দেশ মত তিনি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে থাকেন। তাঁকে আরও বলা হয় এক ব্যক্তি তাঁর আধার কার্ড ব্যবহার করে সিম কিনেছেন এবং একশোর বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে তার মাধ্যমে হাওলা লেনদেন করেছেন। এছাড়াও ওই সিম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো হয়েছে। ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি নিজেকে সিবিআই অফিসার হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর দফায় দফায় তাঁর কাছ থেকে ৮ লক্ষ, ১৫ লক্ষ, ২০ লক্ষ এবং ২৬ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়।
গাজিয়াবাদ পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর ৩১৮(৪) (প্রতারণা০, ৩৪০(২) (জালিয়াতি), ২০৪ (নিজেকে সরকারি আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দেওয়া), ৩০৮(২) (জুলুম), ৩২৫(৪) (সম্পত্তির অপব্যবহার), ৩(৫) (একাধিক ব্যক্তি দ্বারা সংগঠিত অপরাধ) এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারায় এফআইআর রুজু করা হয়েছে।
এই ধরণের সমস্যায় পড়লে কী করবেন?
যদি আপনার সন্দেহ হয় যে আপনি “ডিজিটাল অ্যারেস্ট” প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তাহলে অবিলম্বে সেই কল কেটে দিন এবং কোনও তথ্য তাদের কাছে দেবেন না।
ঘটনার কথা পুলিশ বা সাইবার ক্রাইম হেল্পলাইনে (1930 অথবা cybercrime.gov.in এর মাধ্যমে) রিপোর্ট করুন এবং কল রেকর্ড এবং কথাবার্তার যে কোনো প্রমাণ সংগ্রহ করুন।
যদি আপনি তাদের দাবিমত টাকা পাঠিয়ে থাকেন, তাহলে লেনদেন বন্ধ করতে এবং আরও ক্ষতি আটকাতে অবিলম্বে আপনার ব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে আইনি পরামর্শের জন্য একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন।
ভারতে ডিজিটাল অ্যারেস্ট কি আইনসম্মত?
তথ্য অনুসারে, ভারতের আইনে "ডিজিটাল অ্যারেস্ট" সংক্রান্ত কোনও বিধান নেই। এটি এমন একটি প্রতারণা যেখানে প্রতারকরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছদ্মবেশে ভুয়া গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে এবং অর্থ আদায় করে। ভারতীয় আইনে ডিজিটাল অ্যারেস্টের কোনও বিধান নেই এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি কখনই কাউকে ডিজিটালভাবে গ্রেপ্তার করবে না।
cybercrime.gov.in-এর তথ্য অনুসারে, জাতীয় সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল (এনসিআরপি)-এ এই বিষয়ক অনেক অভিযোগ জমা পড়ছে, যেখানে পুলিশ কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই), মাদকদ্রব্য বিভাগ, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই), এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সাইবার অপরাধীদের দ্বারা ভয় দেখানো, ব্ল্যাকমেইল করা, চাঁদাবাজি এবং "ডিজিটাল গ্রেপ্তার"-এর মত ঘটনা আছে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী এই ধরনের অপরাধীদের কাছে প্রচুর পরিমাণে অর্থ খুইয়েছেন। এটি একটি সংগঠিত অনলাইন অর্থনৈতিক অপরাধ এবং এটি আন্তঃসীমান্ত অপরাধ সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত বলে জানা গেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন