
দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে 'ডিজিটাল গ্রেফতারি'। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরিসংখ্যান বলছে এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসেই ১২০ কোটি টাকা খুইয়েছেন সাধারণ মানুষ! সকলকে সতর্ক হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
২৭ অক্টোবর রবিবার 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে ডিজিটাল গ্রেফতারি নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশে এমন কোনও গ্রেফতারিই নেই। সাইবার প্রতারকরা এটাকে নতুন অস্ত্র হিসেবে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। দেশের কোনও আইনে এর উল্লেখ নেই। তদন্তের জন্য কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা কখনোই কাউকে ফোনে যোগাযোগ করে বা ভিডিও কল করে তথ্য চায় না। এমন কল এলে কেউ ভয় পাবেন না। বরং প্রতারকদের কলটি রেকর্ড করুন। নিকটবর্তী থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। প্রয়োজনে ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনে যোগাযোগ (নম্বর - ১৯৩০) করতে পারেন।'
কীভাবে হয় এই প্রতারণা? জানা যাচ্ছে প্রতারকরা প্রথমে আপনাকে ফোন করবে। তারপর সিবিআই, ইডি অথবা অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী শাখার অফিসার হিসেবে নিজের পরিচয় দেবে। আপনার বন্ধু বা আত্মীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানাবে। ভিডিও কল করে আপনার মুখও দেখতে চাইবে। উল্টো দিকের লোক পুলিশের মতোই পোশাক পরে থাকবে, যাতে সন্দেহের কোনও জায়গা না থাকে। যদি কেউ ভয় পায় তাহলে প্রতারকদের চাপসৃষ্টি করার কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। প্রমাণ হিসেবে 'ভুয়ো' অ্যারেস্ট মেমো দেখাতে পারে। এরপর ওই আত্মীয়কে ছাড়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার দাবি করবে আপনার কাছে।
যত দিন যাচ্ছে এই ধরণের সাইবার প্রতারণার অভিযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ ছিল সাড়ে ৪ লক্ষের কাছাকাছি। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় সাড়ে ৯ লক্ষের বেশি। ২০২৩ সালে ১৫ লক্ষের অধিক। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ অভিযোগ জমা পড়েছে। ডিজিটাল গ্রেফতারির ফাঁদে পড়ে চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসেই ১২০ কোটি টাকা খুইয়েছেন সাধারণ মানুষ। এই নথি শুধু সরকারি হিসাবে। যে অভিযোগগুলি জমা পড়েনি, তার হিসাব যোগ করলে প্রতারণার অঙ্ক আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাইবার প্রতারণার সম্মুখীন হলে বা এমন কোনও ফোন এলে কখনোই ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা উচিত নয়। প্রয়োজনে ফোনের ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ রাখুন। ব্যাঙ্কের সাথেও যোগাযোগ করুন। নিজের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জানুন। কল রেকর্ড করে পুলিশের হাতে তুলে দিন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন