
গত সাত বছরে হিমাচল প্রদেশে অন্তত ৪৩৪টি ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছেন ১২৩ জন। হিমাচল সরকারের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে, যা সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়েছে। রিপোর্ট বলছে, ভয়াবহ এই দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষিজমি ও মানুষের জীবিকা।
শীর্ষ আদালত এ প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, কেবল হিমাচল প্রদেশ নয়, সমগ্র হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলই এখন গভীর বিপদের সম্মুখীন। বিচারপতি বিক্রম নাথ ও সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছে। উল্লেখযোগ্য বিষয়, আদালত নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা দায়ের করেছে এবং তার নির্দেশে হিমাচল সরকার পরিবেশ বিপর্যয় সংক্রান্ত বিশদ তথ্য আদালতে জমা দিয়েছে।
সরকারি সমীক্ষা বলছে, হিমবাহের সংখ্যা খুব একটা কমছে না, কিন্তু উদ্বেগজনক মাত্রায় হ্রাস পাচ্ছে তাদের আয়তন। ২০০১-০২ সালের সঙ্গে ২০১৬-১৯ সালের তথ্য তুলনা করলেই এই পরিবর্তন স্পষ্ট। ইতিমধ্যেই হিমবাহের নিয়মিত নথিভুক্তি ও পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে।
এই বছরও বর্ষাকালে হিমাচল, উত্তরাখণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীরে একের পর এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। অল্প সময়ে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, হঠাৎ হড়পা বান, ভূমিধস এবং তুষারপাতের ধরন পাল্টে যাওয়ায় রাজ্যের পাহাড়ি জনপদে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বিশাল ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজমি ও জীবিকার মূল স্তম্ভগুলির। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, একাধিক কারণ এই বিপর্যয়ের পেছনে দায়ী। শিল্প স্থাপন ও অবকাঠামোগত প্রকল্পে পরিবেশবিধি উপেক্ষা করা, সড়ক নির্মাণে যথেষ্ট সতর্কতার অভাব এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে লাগামছাড়া গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ— সব মিলিয়েই হিমালয় অঞ্চলের পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলছে।
আদালতের নির্দেশে হিমাচল সরকার জানিয়েছে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব চিহ্নিত হয়নি। সড়ক প্রকল্প শুরু করার আগে পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখা হয়েছে বলেও দাবি সরকারের। তবে এ নিয়ে আদালত নিজস্ব পর্যবেক্ষণ জানাবে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্ট।