
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করেছে। যার ফলে চাকরিহারা হয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার (২৫,৭৫২) জন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরেই এদিন দুপুরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ সুপ্রিম কোর্টের রায় আমরা বিস্তারিত পড়েছি। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান রয়েছে। কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই”। রায়ের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যাঁরা ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের টাকা দিতে হবে না।
এরপরেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে মমতা বলেন, “আত্মরক্ষার জন্যেও তো সুযোগ দেওয়া উচিত। এতগুলো শিক্ষকের ভবিষ্যৎ! ভুলে যাবেন না, এরা সবাই স্কুলের শিক্ষক। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দেওয়া কি বিজেপির টার্গেট?” মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “এই মামলায় তো তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীকে জেলে রেখে দেওয়া হয়েছে, অনেক দিন হয়ে গেল! এক জনের অপরাধে কত জনের শাস্তি হয়?”
রায়দানের সময় শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার। সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “ওরা বলেছে তিন মাসের মধ্যে প্রসেস করতে, আমরা তা করে দেব। শিক্ষামন্ত্রীকে ইতিমধ্যে বলেছি, এসএসসিকে আমাদের ভাবনা জানাতে। এসএসসি স্বশাসিত সংস্থা। ওরা যেমন ভাল বুঝবে, নিজেদের মতো করে করবে। তবে আমরা চাই এটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক”।
এত গুলো মানুষের চাকরি গেল, এবার স্কুলে কে পড়াবে? প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, “যাঁদের বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১১৬১০ জন নবম-দশম শ্রেণিতে পড়াতেন। ৫৫৯৬ জন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াতেন। বাকিরা অন্য ক্লাসে। আপনারা জানেন, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এটি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ‘গেটওয়ে’। তাঁদের মধ্যে অনেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের খাতা দেখছেন। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয়, ২৬ হাজারের চাকরি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে স্কুলে পড়াবে কে!”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আদালতের রায় যেমন আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে, তেমনই রায় আমাদের দু’টো পথও দিয়েছে। রায় মেনেই আমরা সেটা করব। ২০১৬ সালে কারা কারা মন্ত্রী ছিলেন, আমরা রেকর্ড খুঁজে বার করব। কোনও একটা জেলার কথা তো আমরা জানিই”।
তিনি আরও বলেন, “যাদের চাকরি গিয়েছে, তারা বিচার পাওয়ার জন্য ডিপ্রাইভড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছেন। তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, সবাই একত্রিত হতে চান। তাঁরা অনুরোধ করেছেন, শিক্ষামন্ত্রী-সহ আমি যদি তাঁদের সভায় উপস্থিত থাকি, তাঁরা খুশি হবেন”।
আগামী ৭ এপ্রিল নেতাজি ইনডোরে চাকরিপ্রার্থীদের কথা শুনতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ধৈর্য্য হারাবেন না। মানসিক চাপ নেবেন না। যখন প্রক্রিয়া হবে, আদালত তো আপনাদের সকলকে আবেদন করতে বলেছে। আপনারা আবেদন করুন”।
রাজ্যের বিরোধী দলগুলিকে নিশানা করে তিনি বলেন, “এই পরিবারগুলি অচল হয়ে গেলে বিজেপি-সিপিএমও সচল থাকবে না। কোনও ঘটনা ঘটলে, দায়িত্ব আপনাদের হবে”। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “যাঁরা ন্যায্য ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের পাশে আমরা ছিলাম, আছি এবং থাকব”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন