

২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। ২৬ হাজার জনেরই (আদতে ২৫ হাজার ৭৫২ জন) চাকরি গেল। ব্যতিক্রমী শুধু একজন – ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষিকা সোমা দাস। এক্ষেত্রেও হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, মানবিক কারণে সোমার নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে না।
২০২২ সালে হাইকোর্টের নির্দেশেই চাকরি পেয়েছিলেন সোমা দাস। ২০২৪ সালে ২২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ পুরো প্যানেল বাতিল করলেও সোমাকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। সেই রায়ই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট।
বীরভূমের নলহাটির মেয়ে সোমা ২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের (এসএলএসটি) পরীক্ষায় বসেছিলেন। সেই সময় মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাননি তিনি। এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্যানসারে আক্রান্ত হন তিনি। তবুও চাকরির দাবিতে লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। রাস্তায় ধর্ণা দিয়েছেন, অবস্থান বিক্ষোভ করে গেছেন।
সেই সময় মামলা চলাকালীন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এসেছিলেন সোমা। আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের থেকেই সোমার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পারেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এরপর রাজ্য সরকারের কাছে সোমাকে চাকরি দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন বিচারপতি। তাঁরই অনুরোধ মেনে বীরভূমের নলহাটি -১ ব্লকের মধুরা হাইস্কুলে বাংলার শিক্ষিকা হিসাবে সোমাকে নিয়োগ করে কমিশন।
বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের রায় শুনে সোমা বলেন, ‘‘আমি কখনওই চাইনি শুধু আমার চাকরি থাকুক, বাকিদের চলে যাক। এই রায় আমার কাছে অনভিপ্রেত। কারণ, গোটা প্যানেলে অনেকেই যোগ্য ছিলেন। সরকার এবং কমিশনের (এসএসসি) কিছুটা গাফিলতির কারণেই যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব হল না”।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শুনে হতাশ আন্দোলনরত 'যোগ্য' শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কলকাতার শক্তিগড় হাইস্কুলের শিক্ষিকা নিজিয়া খাতুন এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “যার ফাঁসির অর্ডার হয়ে গেছে সে আর কী বলবে বলুন? এটা কোনও বিচার হল? এরকম হওয়া সম্ভব কখনও? যারা কোনও দোষ করল না, তারা শাস্তি পাচ্ছে। রোজগার কেড়ে নেওয়া, সম্মান কেড়ে নেওয়া, আর ফাঁসির দড়িতে ঝুলে পড়া একই ব্যাপার। তিন মাস পর যে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে কি গ্যারান্টি আছে যে সেখানে টাকার খেলা শুরু হবে না? যারা নির্দেশ দিচ্ছেন, আবার পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করুণ, তারা নিজেরা পারবে নতুন করে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেতে? বিনা দোষে আমরা মারাত্মক শাস্তি পেয়ে গেলাম, যেটা আমাদের পাওয়ার কথা ছিল না”।
সাগর মণ্ডল নামে আর এক শিক্ষক বলেন, “আমরা গভীরভাবে আশাহত এবং মর্মাহত। এটা চূড়ান্ত একটা অমানবিক রায়। এই রায়কে আমরা কখনওই মান্যতা দেব না। এই রায়কে বলা যেতে পারে ভারতবর্ষের একটা ঐতিহাসিক রায়। একটা অন্যায়কে সমর্থন করা, প্রশয় দেওয়া এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক রায়। কারণ সকলেই দুর্নীতিগ্রস্ত চাকরিপ্রার্থী নয়। ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করার পরেও কিসের জন্য ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হল? এটার দায় একমাত্র এসএসসির”।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন