
টাকা তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের এক সমবায় ব্যাঙ্কে। ১০ দিনে ২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। এমনকি লিমিট বেঁধে দেওয়ার পরেও তা মানতে নারাজ গ্রাহকেরা। তাঁদের দাবি, ব্যাঙ্কের উপর আর আস্থা নেই।সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে মনোনয়ন জমার দিন তুমুল গন্ডগোলের জেরে আতঙ্কিত গ্রাহকদের বড় একাংশ।
কিন্তু কেন এমন হল? ঘটনার সূত্রপাত, সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে। এত দিন ওই ব্যাঙ্ক ছিল সিপিআইএমের দখলে। তবে নতুন করে নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। গত ১৭ ও ১৮ জুন ছিল ওই ব্যাঙ্কের নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব। অভিযোগ, নতুন করে ভোটের জন্য বিরোধীদের কাউকেই মনোনয়ন তুলতে দেয়নি শাসক দল তৃণমূল।
এমনকি পুলিশের তরফ থেকেও শাসক দলকে বাধা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বরং, বাম জোটের দুই প্রার্থীকে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে সিপিআইএমের অভিযোগ। অবশেষে ওই ব্যাঙ্কের ৫৩টি আসনেই কেবলমাত্র তৃণমূল প্রার্থীরাই নমিনেশন বা মনোনয়ন জমা দেন। আগামী ১৩ জুলাই গৌরা-সোনামুই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ভোট। এদিকে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে নমিনেশনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে সিপিআইএম। আগামী ১৭ জুলাই সেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা।
আর বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে না দেওয়ার খবর সামনে আসার পর থেকেই আতঙ্কে গৌরা-সোনামুই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির গ্রাহকরা। টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে তাঁদের মধ্যে। সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ১৯ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত গত ১০ দিনে ২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে টাকা তোলার উর্দ্ধসীমা ২০ হাজার টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও তা মানতে নারাজ গ্রাহকেরা।
সমবায় ব্যাঙ্কের গ্রাহক অমর পাখিরা, বানেশ্বর রানারা বলেন, "আতঙ্কে আমরা টাকা তুলে নিচ্ছি। কোন ভরসায় টাকা রাখব? যেখানে বিরোধীদের নমিনেশনই তুলতে দেওয়া হয়নি। নমিনেশনকে ঘিরে মারধর, অশান্তি হয়। সেখানে আমরা আমাদের টাকা কোন ভরসায় গচ্ছিত রাখব? আমাদের টাকা যে সুরক্ষিত থাকবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই"।
এনিয়ে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সৈকত জানা বলেন, "এটা ঠিক যে গ্রাহকদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাই তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও অনেকেই মানছেন না। ১৯ জুনের পর থেকে শুক্রবার (৪ জুলাই) অবধি ২ কোটি টাকার বেশি তুলে নেওয়া হয়েছে"।
এই নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর সোনাখালি এরিয়া কমিটির সিপিআইএমের সম্পাদক অমল ঘোড়ুই বলেন, "দাসপুর ২ নম্বর ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সমবায় সমিতিগুলি কোনওটা বন্ধ হয়ে গেছে। কোনওটা বন্ধ হওয়ার মুখে। কোটি কোটি টাকা ওখান থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের যাঁরা পরিচালনা করতেন তাঁরা নয়ছয় করেছেন, লুঠ করেছেন। তাই এখানের ক্ষেত্রেও জনগণ আর আস্থা রাখতে পারছেন না"।
অন্যদিকে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষ বলেন, "এলাকার যারা সমবায়ের গ্রাহক, তাঁরা বুঝেছে ওই সমবায় যদি তৃণমূল দখল করে তাহলে সমস্ত আমানত নয়ছয় হয়ে যাবে। এই জন্যই মানুষ তাঁর আমানত তুলে নিচ্ছে"।
যদিও বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। পুরোটাই সিপিআইএমের উস্কানি বলে দাবি করছেন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আশিস হুদাইত বলেন, "বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন