পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের এখনও বাকি ৮ থেকে ৯ মাস। তার আগেই ২৬-এর নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ২১ জুলাইয়ের আগে বঙ্গে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুর্গাপুরে ৫৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস ছাড়াও এদিন দুর্গাপুরের জনসভা থেকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকে কড়া ভাষায় নিশানা করলেন তিনি।
শুক্রবার বিকেল ৪টের একটু পর প্রথমে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান দুর্গাপুরের সরকারি সভায়। সেখানে ৫৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে -
১। বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলার জন্য ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেডের সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (সিডিজি) প্রকল্পের (১৯৫০ কোটি টাকার) ঘোষণা।
২। দুর্গাপুর হলদিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন-এর দুর্গাপুর থেকে কলকাতা (১৩২ কিলোমিটার) অংশটি দেশের জন্য উৎসর্গ করা।
৩। দুর্গাপুর ইস্পাত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১৪৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার শিলান্যাস।
৪। রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে পুরুলিয়া-কলকাতা রেললাইন ডাবলিং (৩৬ কিলোমিটার)। এর ফলে জামশেদপুর, বোকারো, ধানবাদের কারখানাগুলির মধ্যে রেল সংযোগের সুবিধা বাড়বে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্র। প্রকল্পটি ৩৯০ কোটি টাকার।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় উপস্থিত ছিলেন - রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এবং রাজ্যসভার সাংসদ তথা দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। এছাড়া ছিলেন - রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী ও শান্তনু ঠাকুর।
প্রশাসনিক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারতের বিকাশে দুর্গাপুরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্গাপুর ভারতের শ্রমশক্তির বড় কেন্দ্র। পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে বিকাশ হচ্ছে। বহু মানুষের রোজগার নিশ্চিত হবে। কলকাতা মেট্রো দ্রুত বিস্তার হবে। রেলের বিকাশ হচ্ছে। ২৫-৩০ লাখ ঘরে পাইপলাইনে গ্যাস পৌঁছোচ্ছে। গত ১০ বছরে গ্যাস সংযোগে অভাবনীয় কাজ হচ্ছে।’’
এরপর প্রশাসনিক সভা ছেড়ে রাজনৈতিক মঞ্চে পৌঁছান মোদী। সেখানে গিয়ে প্রথমেই তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি বিকশিত বাংলা চায়। বাংলার এই মাটি প্রেরণায় পূর্ণ। বিজেপি সমৃদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করতে চায়। এক সময়ে বাংলা সমৃদ্ধই ছিল। বিকাশের কেন্দ্র ছিল। কিন্তু এখন আর তা নেই। আমরা এই অবস্থাই বদলাতে চাইছি। এখন কাজের জন্য বাইরে যেতে হয় বাংলার মানুষকে। বাংলাকে এই অবস্থা থেকে বার করতে হবে।’’
এরপরেই সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘বিজেপি ক্ষমতা এলেই বাংলা দেশের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ রাজ্য হয়ে উঠবে। এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু তৃণমূল বাংলাকে শিল্পোন্নত হতে দিচ্ছে না। তাই তৃণমূলকে বাংলা থেকে সরাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গকে এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে, এখানে নতুন বিনিয়োগ আসে। কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কিন্তু যত দিন তৃণমূল থাকবে, তত দিন এ সব হবেনা।’’
এরপরেই মুর্শিদাবাদের অশান্তির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, তৃণমূলের গুন্ডাগিরির জন্যই এখানে উদ্যোগপতিরা আসেন না। তৃণমূলকে সরাতেই হবে। সিন্ডিকেটরাজ দেখেই পালিয়ে যান বিনিয়োগকারীরা। প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা সব রসাতলে যাচ্ছে তৃণমূল জমানায়।’’
মোদীর মুখে এদিন উঠে আসে আরজি কর, কসবা প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার হাসপাতালও মেয়েদের জন্য সুরক্ষিত নয়। তখনও দেখা গিয়েছে, কী ভাবে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। এর পর কলেজেও একটা মেয়ের উপর কী ভাবে অত্যাচারা চালানো হল। সেখানে দেখা গেল তৃণমূলের লোকেরা জড়িত।’’
মোদী বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীদের হয়ে সরাসরি নেমে পড়েছে তৃণমূল। কান খুলে শুনে রাখুন, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ীই পদক্ষেপ করা হবে।"
একযোগে তৃণমূল ও সিপিআইএমকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, "তৃণমূল আর বামেরা বাংলাকে ধ্বংস করে দিল। বিজেপি-ই বাংলাকে ধ্রুপদীর মর্যাদা দিয়েছে। দেশে যেখানে বিজেপি সেখানেই বাংলাকে সম্মান দিয়েছে। বাংলার অস্মিতা বিজেপির কাছে সুরক্ষিত।" শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্নীতি নিয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, "শিক্ষা ব্য়বস্থাকে ধ্বংসের মুখে ফেলেছে। ডাবল অ্যাটাক হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। এই যে শিক্ষকরা যাদের চাকরি নেই এটাও তৃণমূলের দুর্নীতির জন্য।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন