পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর থেকেই ধর্মীয় বিভাজনের আওয়াজ তুলেছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে সেই কাশ্মীরেই জঙ্গি দমন অভিযানে নিহত হলেন বাংলার যুবক জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাবার জবাব, ‘এবার প্রমাণ হল তো, আমরা কোন দিকে?’
মঙ্গলবার পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকে তৎপর ভারতীয় সেনা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্ত জঙ্গি দমন অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। উধমপুরের সেনা দলে ছিলেন ঝন্টু আলি শেখ। তল্লাশি অভিযান চলাকালীন সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় সন্ত্রাসবাদীরা। পাল্টা জবাব দেয় সেনাও। দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে আহত হন ঝন্টু। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর।
শুক্রবার জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর জেলায় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় প্রাণ দেন প্যারাট্রুপার ঝন্টু আলী শেখ। তাঁকে শুক্রবার সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ, বিএসএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছে। জম্মুর ১৬৬ সামরিক হাসপাতালে এই সৈনিকের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পরে, তার মরদেহ তার জন্মস্থান - পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার পাথরঘাটা গ্রামে শেষকৃত্যের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে সেনা আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
ঝন্টু আলির বাড়ি নদিয়ার তেহট্টের সাবুর-আকালিরাতে। যা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ছোট থেকেই সীমান্তে বন্দুক কাঁধে জওয়ান দেখে বড় হওয়া ঝন্টুর স্বপ্ন ছিল ভারতীয় সেনাতে যোগদানের। আন্দুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ভর্তি হন বেতাইয়ের বিআর আম্বেদকর কলেজ। সেখানে স্নাতক হওয়ার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০০৮ সালে থেকে তিনি কাশ্মীরে কর্তব্যরত ছিলেন। ৬ প্যারা এসএফ-এ কর্মরত ছিলেন তিনি।
তবে শুধু ঝন্টু নয়। সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছে তাঁর দাদা এবং বৌদিও। বৌদি অনিন্দিতা শেখও কাশ্মীরে কর্মরত। বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই ঝন্টুর মৃত্যুর খবর বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছেন। বাড়িতে খবর আসতেই কান্নার রোল ওঠে নদিয়ার তেহট্টের বাড়িতে।
ছেলের ছবি বুকে আঁকড়ে মা আকালি বিবি এবং বাবা সাবুর আলির জবাব, ‘ছেলে মরে প্রমাণ করল, আমরা কোন দিকে!’ উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তানের কথা উঠলেই অনেক সময় তাঁদের শুনতে হত, ‘যুদ্ধে কোন দিকে?’ সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে নিহত হয়ে সেই জবাবই দিল ঝন্টু বলে দাবি পরিবারের।
সদ্য নিহত ঝন্টু আলির বাবা মা ছাড়াও বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ঝুমা এবং তাঁদের দুই সন্তান, তনভির এবং রেহানা। তাঁরা থাকেন আগ্রার সেনা ক্যান্টনমেন্টে। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে দিল্লি পৌঁছেছেন স্ত্রী ঝুমা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন