
স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগ মামলায় ফের রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই-র নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি সঞ্জয়কুমার রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে কড়া প্রশ্ন তোলেন। বিশেষত কলকাতা হাইকোর্টে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের হয়ে সওয়াল করায় অ্যাডভোকেট জেনারেলকে কার্যত ভর্ৎসনা করেন তিনি। পাশাপাশি সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
আদালতে বিচারপতি সঞ্জয়কুমার বলেন, “হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ওএমআর শিটে কারচুপির মাধ্যমে। এখন আবার সেই ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কেন রাজ্য আদালতে সওয়াল করছে? কতটা সৌভাগ্যবান এই প্রার্থীরা, যাঁদের হয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল লড়ছেন!”
বিচারপতি কুমার বলেন, “বার বার বলেছি দাগিরা কোনও ভাবেই পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। তার পরেও একই আবেদন নিয়ে এত মামলা কেন? যা বলার রায়ে আমরা তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি।” একই সঙ্গে বিচারপতির সংযোজন, “এই অযোগ্যদের জন্য অনেকের জীবন নষ্ট হয়েছে।”
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে মূলত আগামী ৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বরের পরীক্ষা ঘিরে বয়সে ছাড়, প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের নম্বরের দাবি এবং পরীক্ষার সময়সীমা বৃদ্ধির মতো একাধিক আবেদন উঠেছিল। সেই প্রেক্ষিতেই বিচারপতির এই মন্তব্য।
যদিও কমিশনের আইনজীবীরা জানান, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যেই নতুন নিয়োগের আবেদনকারীদের তালিকা পরিশুদ্ধ করা হয়েছে এবং সব 'অযোগ্য’ প্রার্থীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টে গিয়ে তাঁদের হয়ে সওয়াল করার ঘটনায় রাজ্যের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত এদিন সিবিআই তদন্তের অগ্রগতিও জানতে চায়। বিশেষত উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বেঞ্চ।
বিচারপতি কুমার সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “দাগিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা সিবিআইয়ের। তার কী হল?”
অন্যদিকে, নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে চেয়ে 'অযোগ্য'রা কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা দায়ের করেছিলেন, সেই মামলা খারিজ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, এসএসসির তালিকায় হস্তক্ষেপ করার জন্য এটি উপযুক্ত মামলা নয়। পরীক্ষায় বসতে পারবেন না মামলাকারী ‘দাগি’রা। এই সংক্রান্ত ২৪টি মামলা খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
এদিকে এদিনই ধনধান্য অডিটোরিয়ামে দাঁড়িয়ে নিয়োগ জটিলতা নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, “২১ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। কিন্তু মামলার কারণে নিয়োগ থমকে আছে। অনেকের চাকরি চলে গিয়েছে, আবার বহু প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে আদালতের মামলার জটিলতায়।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন