
দিঘায় জগন্নাথধামের পর এবার উত্তরবঙ্গে মহাকাল মন্দির। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে সফর শেষে কলকাতায় ফেরার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, দার্জিলিঙের বিখ্যাত মহাকাল মন্দিরের আদলে শিলিগুড়ির সমতল এলাকায় নতুন এক মহাকাল মন্দির তৈরি করা হবে। তাঁর কথায়, “যাঁরা বয়সের কারণে বা শারীরিক কারণে দার্জিলিঙের ম্যালের উপরের মহাকাল মন্দিরে উঠতে পারেন না, তাঁদের জন্যই সমতলে এই নতুন মন্দির। সেখানে সবচেয়ে বড় শিবমূর্তি গড়া হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিলিগুড়ির আশপাশে উপযুক্ত জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একটি ট্রাস্ট গঠন করে সেই সংস্থার মাধ্যমেই মন্দির নির্মাণের কাজ এগোনোর পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। মমতার কথায়, “দিঘায় যেমন ট্রাস্টের মাধ্যমে জগন্নাথধাম তৈরি হয়েছে, এখানেও তেমনভাবেই আমরা করব। সরকারের পয়সা নয়, স্বচ্ছভাবে ট্রাস্টের মাধ্যমেই তহবিল গড়া হবে।”
বৃহস্পতিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙের ম্যালের মহাকাল মন্দিরে পুজো দেন। সেখান থেকে বেরিয়ে শিলিগুড়িতে নতুন মন্দিরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন তিনি। একই সঙ্গে নির্দেশ দেন, দার্জিলিঙের মহাকাল মন্দিরে প্রবীণ ও বিশেষভাবে সক্ষম দর্শনার্থীদের যাওয়ার জন্য জিটিএ (GTA)-র পক্ষ থেকে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবস্থা করতে।
এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মমতার এই পদক্ষেপকে অনেকেই কৌশলগত বলে মনে করছেন। দিঘায় পুরীর ধাঁচে জগন্নাথ মন্দির গড়া এবং রাজ্য জুড়ে ‘জগন্নাথ প্রসাদ’ বিনামূল্যে বিতরণ — উভয় উদ্যোগেই তৃণমূল সরকার সাড়া পেয়েছে বলে দাবি শাসকদলের। এখন শিলিগুড়িতে মহাকাল মন্দির নির্মাণের ঘোষণাকে অনেকেই সেই ধারাবাহিকতার সম্প্রসারণ হিসেবে দেখছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তরবঙ্গে বিজেপির প্রভাব এখনও তৃণমূলের তুলনায় বেশি। ফলে সেখানে হিন্দু ভোটারদের মন জয়ের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা। তাছাড়া শহরে অবাঙালি ভোটারদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাঁদের কাছেও পৌঁছনোর এক প্রচেষ্টা বলেই দেখা হচ্ছে এই পরিকল্পনাকে।
বিজেপি অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “সরকারি অর্থে মন্দির তৈরি করা সাংবিধানিকভাবে ভুল। ধর্মীয় স্থাপনা সরকার বানাতে পারে না। অযোধ্যার রামমন্দিরও ভক্তদের অনুদানে তৈরি, সরকারের টাকায় নয়।” তাঁর আরও মন্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে বলেই তিনি এই সব ঘোষণা করছেন।”
তবে মমতা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শিলিগুড়ির মহাকাল মন্দির হবে ‘দিঘা মডেল’-এ। অর্থাৎ, স্বতন্ত্র ট্রাস্টের অধীনে, সরকারি অর্থে নয়। সঙ্গে থাকবে একটি কনভেনশন সেন্টার। যাতে পর্যটন এবং ধর্মীয় অবকাঠামো — দুই দিকই উন্নত হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন