ওড়িশার সম্বলপুরে ‘বাংলাদেশী’ সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল রাণার নিথর দেহ ফিরলো মুর্শিদাবাদের গ্রামে। বুধবার রাতে বিজেপি শাসিত ওড়িশার সম্বলপুরে ওই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে একদল যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, মারধোর শুরু করার আগে তাঁর কাছে বিড়ি চাওয়া হয় এবং পরে আধার কার্ড দেখতে চাওয়া হয়।
জুয়েলের সঙ্গে থাকা অন্য দুই যুবক সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। জুয়েলের সঙ্গে থাকা মাজার খানের বক্তব্য অনুসারে, বুধবার রাতে স্থানীয় যুবকদের সাথে বিড়ি নিয়ে জুয়েল এবং তাঁর সঙ্গীর বচসা হয়। বিবরণ অনুসারে, দুষ্কৃতীরা প্রথমে তাদের কাছে বিড়ি চায় এবং এরপর আধার কার্ড দেখতে চায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অন্য এক যুবক নিজামুদ্দিন খান জানিয়েছেন, তাদের বার বার ‘বাংলাদেশী’ বলে সম্বোধন করা হচ্ছি। বাংলায় কথা বলার জন্যই তাদের ‘বাংলাদেশী’ বলে সন্দেহ করা হয়। আধার কার্ড দেখতে চাওয়ার পরেই জুয়েলের মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মাজার। ঘটনার সময় জুয়েল ছাড়াও আরও কয়েকজনের ওপর হামলা হয়েছে এবং এখনও সম্বলপুর হাসপাতালে দু’জন চিকিৎসাধীন আছেন।
যদিও ‘বাংলাদেশী’ সন্দেহে হত্যার কথা অস্বীকার করেছে ওড়িশা পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলায় কথা বলার জন্য বা বাংলাদেশী সন্দেহে নয়, বিড়ি চাওয়া নিয়ে বচসার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্য এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, পাশের রাজ্য থেকে এখানে অনেকেই কাজ করতে আসেন। যাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে তাঁরা এঁদের পূর্বপরিচিত। ঘটনার তদন্ত চলছে।
গত ২০ ডিসেম্বর কাজের খোঁজে ওড়িশার সম্বলপুরে গেছিলেন মুর্শিদাবাদের সুতি থানার অন্তর্গত চকবাহাদুরপুরের জুয়েল রানা সহ আরও কয়েকজন। ওই অঞ্চলে নির্মাণকাজের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত ছিলেন।
বিজেপি শাসিত রাজ্যে গিয়ে এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের গণপিটুনির ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটা আর রাজনীতি নয়। এটা বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলায় কথা বলা এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়েছে।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, "বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি এবং সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নন। জুয়েল রানার হত্যাকান্ড সে কথাই আবার প্রমাণ করে দিল সংখ্যালঘু মানুষদের জীবন-জীবিকা সারা দেশেই মোদি সরকারের আমলে আজ বিপন্ন।”
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন