

আবারও গণপিটুনির শিকার রাজ্যের এক পরিযায়ী শ্রমিক। বুধবার রাতে বিজেপি শাসিত ওড়িশার সম্বলপুরে এই ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশী সন্দেহে মুর্শিদাবাদের সুতি থানার চকবাহাদুরপুরের ওই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ওই যুবক আরও কয়েকজনের সঙ্গে ওড়িশার সম্বলপুরে কাজের খোঁজে গেছিলেন।
দিন কয়েক আগেই জুয়েল রানা নামের ওই যুবক আরও কয়েকজনের সঙ্গে ওড়িশার সম্বলপুরে যান রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য। গতকাল রাতে স্থানীয় এক দোকানে বসে তাঁরা বাংলায় কথা বলছিলেন। এই সময়েই বেশ কয়েকজন তাদের ওপর চড়াও হয় এবং তাদের পরিচয় জানতে চায়। ওই যুবকরা তাদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখালেও তাদের ওপর হামলা শুরু হয়। তিনি বাঙালী যুবকের মধ্যে দু’জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও জুয়েল পালাতে পারেনি। এরপরেই তাঁকে ধরে গণপিটুনি শুরু হয়। পুলিশ ওই হত্যার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এবং হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
জুয়েল রানার হত্যার খবর পেয়েই মুর্শিদাবাদের তাঁর বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন জেলার সিপিআইএম ও ডিওয়াইএফআই নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই ওড়িশায় বাঙালি ব্যবসায়ীদের রাজ্য ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছিলেন, ওড়িশার বিজেপি সরকার সেই রাজ্যে বসবাসকারী বহু বাঙালি ব্যবসায়ীকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে ওড়িশা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত। ভারতের নাগরিক যে কোন রাজ্যে যেতে পারেন থাকতে পারেন।
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এটা আর রাজনীতি নয়। এটা বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলায় কথা বলা এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়েছে। ওড়িশার সম্বলপুরে জুয়েল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, কোনো অপরাধের জন্য নয়, কোনো হিংসার জন্য নয়, শুধু তার ভাষার জন্য, তার পরিচয়ের জন্য, একজন বাঙালি হিসেবে তার অস্তিত্বের জন্য।
বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, “বাংলার বিজেপি কোথায়? দিল্লির বুটের আড়ালে লুকিয়ে আছে। মুখ বন্ধ, বাধ্য, মেরুদণ্ডহীন।” জবাবদিহি করার জন্য কেউ নেই। একজন নিহত বাঙালির জন্য একটিও শব্দ নেই। কারণ বাংলার বিজেপির কাছে বাঙালিদের রক্তের চেয়ে দিল্লির প্রতি আনুগত্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এক বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, "ওড়িশায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে গিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সুতির যুবক জুয়েল রানা। আমরা এই বীভৎস ঘটনার তীব্র নিন্দা করি এবং নিহত জুয়েল রানার শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি জানাই আন্তরিক সমবেদনা।"
ওই বিবৃতিতেই তিনি আরও জানিয়েছেন, "বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি এবং সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নন। জুয়েল রানার হত্যাকান্ড সে কথাই আবার প্রমাণ করে দিল সংখ্যালঘু মানুষদের জীবন-জীবিকা সারা দেশেই মোদি সরকারের আমলে আজ বিপন্ন। একের পর এক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে, কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার এ বিষয়ে চুপ! তারা সংশ্লিষ্ট রসজ্যগুলির সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো দৌত্য চালাচ্ছেন না কেন?"
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন