
তৃণমূলের অন্দরে ফের শোরগোল। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর মতুয়াদের নিয়ে করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এবার প্রকাশ্যে এল সতীর্থ সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের অবস্থান। যদিও তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, মহুয়ার বক্তব্য তাঁর ‘ব্যক্তিগত’, দলের নয়। তা সত্ত্বেও মমতাবালার অনুগামী সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছে।
চিঠিতে মহুয়ার মন্তব্যকে ‘আত্মসম্মানে আঘাত’ ও ‘ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত’ বলে বর্ণনা করে মুখ্যমন্ত্রীকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। চিঠিতে সাধারণ সম্পাদক সুকেশচন্দ্র চৌধুরীর স্বাক্ষর থাকলেও, সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে মমতাবালার নামও উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, সংগঠনটি তাঁর অনুমতি নিয়েই এই পদক্ষেপ করেছে।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, "কৃষ্ণনগর লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র মতুয়া, নমঃশূদ্র, তফসিলিদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়ে কটাক্ষ করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এমনকি, মতুয়াদের প্রাণপ্রিয় কণ্ঠহার ‘আচারমালা’কে বিদ্রূপ করে ‘কাঠের মালা’ বলে তাচ্ছিল্যভরে অবজ্ঞাসূচক অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। তাতে মতুয়াদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। তাঁর এই অভিব্যক্তি সমগ্র মতুয়া, নমঃশূদ্র সমাজের আত্মসম্মানে আঘাত করেছে, যাতে সমগ্র মতুয়া-তফসিলি সমাজ ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ।’’
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আর্জি জানানো হয়েছে, "আপনি মতুয়াদের এই অসম্মানকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এই ব্যথা নিরসনের জন্য অভিভাবকের ন্যায় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।"
তবে প্রশ্ন উঠছে যখন মহুয়ার মন্তব্যকে ব্যক্তিগত বলে মনে করছেন মমতাবালা, তখন কেন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখার পথ বেছে নিল তাঁর সংগঠন? জবাবে রাজ্যসভার সাংসদ বলেন, “যিনি এমন মন্তব্য করতে পারেন, তাঁর সঙ্গে আমার কথা বলার ইচ্ছা নেই। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তাই সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিনিই এই ব্যথা নিরসনের পথ দেখাবেন।”
বিতর্কের সূত্রপাত কৃষ্ণনগরের এক সভা থেকে। সম্প্রতি ওই সভায় মহুয়াকে মন্তব্য করতে শোনা যায়, “সারা বছর তৃণমূল৷ আর ভোটের সময় সনাতনী৷ এটা কী অঙ্ক ভাই?” এরপরেই মহুয়া মনে করিয়ে দেন, লক্ষ্মীর ভান্ডারে অন্যদের তুলনায় তফসিলি জাতি, জনজাতির মহিলারা বেশি টাকা পাওয়া সত্ত্বেও মতুয়াপ্রধান বুথগুলিতে অন্য দলকে ভোট দেওয়া হয়।
কৃষ্ণনগরের সাংসদের দাবি, ওই বুথগুলিতে ১০০টি ভোটের মধ্যে ৮৫টি যায় বিজেপিতে এবং ১৫টি যায় অন্য দলে। মহুয়ার মন্তব্য—“সারা বছর তৃণমূল, ভোটের সময় সনাতনী… কাঠের মালা পরে সব তো চলে আসেন ভাই ভাতা নিতে!”
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই মতুয়া সমাজ ও ঠাকুরবাড়ির দুই অংশই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও মহুয়ার সমালোচনা করেন।
এর আগে মা কালী-সম্পর্কিত মন্তব্য নিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মহুয়া। এ বার মতুয়াদের নিয়ে মন্তব্য ঘিরে আর এক তৃণমূল সাংসদের অনুগামী সংগঠনের চিঠি-আক্রমণে বিষয়টি অন্য মাত্রা পেল। দলের ভেতরে এখন নজর, মুখ্যমন্ত্রী বা শীর্ষ নেতৃত্ব এ নিয়ে সরাসরি কোনও ব্যবস্থা নেন কি না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন